‘তারা আমাকে মাটিতে ফেলে দেয়। একজন অফিসার আমার পিঠে তার বুট দিয়ে আঘাত করে এবং পেটে লাথি মারে। তারপর আমার হাত বেঁধে একটি ভ্যানে উঠায়। ‘ এভাবেই গ্রেপ্তার হওয়ার বর্ণনা দিচ্ছিলেন ৫১ বছর বয়সী বিক্ষোভকারী মরিয়ম (ছদ্মনাম)।
তিনি গত সপ্তাহে তেহরান থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
পুলিশি হেফাজতে ২২ বছর বয়সী তরুণী মাহসা আমিনির ১৬ সেপ্টেম্বর মৃত্যু হয়। তার পর থেকেই ইরানজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভ দমাতে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী হাজারো মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে।
মরিয়ম বলেছেন, ‘ভ্যানে আমার সঙ্গে কম বয়সের অন্য মেয়েরাও ছিল। তাদের সাহসিকতা দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। তারা চিৎকার করছিল এবং অফিসারদের নিয়ে মজা করছিল। এই প্রজন্ম আমাদের প্রজন্ম থেকে আলাদা। তারা নির্ভীক। ‘
মরিয়ম আরো বলেছেন, ‘তারা আমাকেসহ অন্তত ৬০ জন নারীকে একটি ছোট ঘরে রাখে। সেখানে বসা বা নড়াচড়া করার সুযোগ না থাকায় আমরা একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সেখানে বাথরুম ব্যবহারের কোনো সুযোগ ছিল না। তারা বলেছিল আমাদের ক্ষুধা লাগলে আমরা আমাদের মল খেতে পারি। প্রায় এক দিন পর আমরা রুমের ভেতরে চিৎকার করে প্রতিবাদ করি। তারা তখন আমাদের হুমকি দিতে থাকে যে আমরা চুপ না থাকলে আমাদের ধর্ষণ করা হবে। ‘
মরিয়ম জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে যা দেখা গেছে বাস্তবের পরিস্থিতি তার চেয়েও ভয়াবহ। তিনি একজন কর্মকর্তাকে সৈন্যদের নির্দয় হওয়ার নির্দেশ দিতে শুনেছেন। তাদের নারী কর্মীরাও ভয়ংকর। একজন নারী কর্মী তাকে চড় মেরেছে এবং ইসরায়েলি গুপ্তচর ও যৌনকর্মী বলে গালি দিয়েছে।
বিবিসি ভিডিওগুলোতে দেখেছে, পুলিশ কর্মকর্তারা বিক্ষোভকারীদের প্রতি দয়া না করে তাদের ওপর গুলি চালাতে দাঙ্গা পুলিশ কর্মীদের নির্দেশ দিচ্ছে। এ ছাড়া বিবিসির যাচাই করা কিছু ভিডিওতে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশকে গুলি চালাতে এবং গ্রেপ্তার করতে দেখা গেছে।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের মতে, বিক্ষোভে ৪০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, মৃতের সংখ্যা আরো বেশি।
উল্লেখ্য, হিজাব না পরার দায়ে গত ১৩ সেপ্টেম্বর মাহসা আমিনিকে তেহরান থেকে গ্রেপ্তার করে ইরানের নৈতিকতা পুলিশ। গ্রেপ্তারের তিন দিন পর শুক্রবার হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশের নির্যাতনের কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগ ওঠার পর বিক্ষোভ শুরু হয়।