পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় বালুচিস্তানের রাজনৈতিক কর্মী কারিমা বালোচ দেশটির সেনাবাহিনী এবং রাষ্ট্রের কট্টর সমালোচক ছিলেন, যে কারণে এক সময় তিনি দেশত্যাগে বাধ্য হন। কানাডার টরোন্টোতে নির্বাসিত কারিমা বালোচ রবিবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন, পরে পুলিশ তার মৃতদেহ উদ্ধার করে। কারিমা বালোচের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত দাবি করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় বালুচিস্তানের জন্ম নেওয়া ৩৭ বছর বয়েসী মিজ বালোচ নিখোঁজ হবার পর টরোন্টো পুলিশ একটি অ্যাপিল জারি করে। পরে তার বন্ধুরা জানিয়েছেন, তার মৃতদেহ পাওয়া গেছে।
মৃত্যু সম্পর্কে কী জানা যাচ্ছে?
এক টুইটে টরোন্টো পুলিশ জানিয়েছে, সর্বশেষ রবিবার শহরের কুইন্স কি ওয়েস্ট এলাকার বে স্ট্রিট এলাকায় কারিমা বালোচকে দেখা গেছে। এরপরে আরেকটি টুইটে পুলিশ জানায়, তার ‘অবস্থান চিহ্নিত’ করা হয়েছে, কিন্তু এর বেশি বিস্তারিত কিছু ওই টুইটে বলা হয়নি। কারিমা বালোচের বন্ধু এবং সতীর্থ অধিকারকর্মীরা জানিয়েছেন, তার মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া গেলেও মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে তাৎক্ষনিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।
মঙ্গলবার বালোচের বোন মাহগানজ বালোচ বিবিসিকে বলেছেন, তার বোনের মৃত্যু ‘কেবল পরিবারের জন্যই নয়, বালুচিস্তানের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের জন্যই এক ট্রাজেডি’। তিনি বলেন, ‘ও (কারিমা) বিদেশে যেতে চায়নি, কিন্তু যেহেতু পাকিস্তানে অধিকার দাবি করার কারণে ওর জন্য দেশে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল।’
কে ছিলেন কারিমা বালোচ?
বালুচিস্তান প্রদেশে বহু বছর যাবত বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন চলছে। সেখানকার অন্তত আধা ডজন বিচ্ছিন্নতাবাদী দল বা গোষ্ঠী সক্রিয়ভাবে স্বাধীন বালুচিস্তানের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। কারিমা বালোচ পাকিস্তানের নিষিদ্ধ সংগঠন বালোচ স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন বিএসও’র সাবেক সভাপতি ছিলেন, এবং সংগঠনটির প্রথম নারী নেতা ছিলেন তিনি। প্রাণ নিয়ে সংশয় বোধ করায় রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে ২০১৫ সাল থেকে বালোচ কানাডায় বাস করছিলেন। তার এক দশক আগে ২০০৫ সালে বালুচিস্তানের তুরবাত এলাকায় একজন আন্দোলনকারী হিসেবে তার উত্থান ঘটে।
সেখানকার নিখোঁজ মানুষদের সন্ধান দাবি করে এক মিছিলে তাকে প্রথম দেখা গিয়েছিল, যেখানে তিনি নিজেও তার একজন নিখোঁজ আত্মীয়ের ছবি নিয়ে পথ হেঁটেছিলেন। বালুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকারীদের অভিযোগ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেখানকার হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মী গুমের শিকার হয়েছেন। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বালুচিস্তানে ব্যাপক মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ আছে।
কিন্তু স্বায়ত্তশাসনের দাবির কারণে রাজনৈতিক কর্মীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন এমন অভিযোগ কখনোই স্বীকার করেনি পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী। কারিমা বালোচের পরিবারের কয়েকজন সদস্য বহু বছর ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং তার একজন চাচা ও একজন মামা এর আগে নিখোঁজ হন, যাদের মৃতদেহ পরে পাওয়া যায়। দু’হাজার ছয় সালে তিনি বিএসও’র প্রধান হন। পরের বছর সংগঠনটির বহু কর্মী হয় ‘নিখোঁজ’ অথবা আত্মগোপনে চলে যায়, এবং ২০১৩ সালে সরকার সংগঠনটি নিষিদ্ধ করে।
কারিমা বালোচের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে মামলা করা হলে তিনি নির্বাসনে চলে যান। টরোন্টোতে বসবাস শুরু করার পর সতীর্থ রাজনৈতিক কর্মী হামাল বালোচকে বিয়ে করেন। নির্বাসনে থাকা অবস্থাতেও তিনি সামাজিক মাধ্যম এবং কানাডা ও ইউরোপে মানবাধিকার কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন। পরের বছর তিনি বিবিসির ১০০ প্রেরণাদানকারী এবং প্রভাবশালী নারীর বার্ষিক তালিকায় স্থান করে নেন।
কারিমা বালোচের মৃত্যুর খবরে বালুচিস্তান ন্যাশনাল মুভমেন্ট বিএনএম ৪০-দিন ব্যাপী শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া অফিস এক টুইট বার্তায় লিখেছে, কারিমা বালোচের এই মৃত্যু খুব বেদনাদায়ক এবং যত দ্রুত সম্ভব এর কার্যকর তদন্ত করতে হবে। দায়ী ব্যক্তিদের মৃত্যুদণ্ড বাদে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন