এক নারীর দুটি জরায়ু, আর দুটিতেই সন্তান ধারণ করেছেন তিনি। একই মায়ের দুটি আলাদা জরায়ুতে স্বতন্ত্রভাবে বেড়ে উঠছে দুটি শিশু। শুনতে অদ্ভূত শোনালেও, সত্যিই এই ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা অঙ্গরাজ্যে।
কেলসি হ্যাচার নামের ৩২ বছর বয়সী ওই নারীর শরীরে মিলেছে দুটি সক্রিয় জরায়ু। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দুটি জরায়ুতেই স্বতন্ত্রভাবে শিশুর ভ্রূণ পরিণত হচ্ছে বলে। এমন পরিস্থিতিতে তার সন্তান প্রসবও যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
জানা গেছে, কেলসি হ্যাচার ১৭ বছর বয়স থেকেই জানতেন, তার দুটি জরায়ু রয়েছে। স্বামী ক্যালেব ও তিন সন্তান নিয়ে তার সুখের সংসার। গত বছরের মে মাসে গর্ভবতী হয়েছেন এমন ধারণা থেকে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করেন তিনি। সেই রিপোর্টেই জানা যায়, তার শরীরে এক জোড়া জরায়ু ও দুটিতেই বড় হচ্ছে আলাদা ভ্রূণ।
অন্তঃসত্ত্বা কেলসির শরীরে জোড়া জরায়ুর কথা ছড়িয়ে পড়ে মুহূর্তেই। রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায়। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয় সেই খবর। তার চিকিৎসক ভারতীয় বংশোদ্ভূত শ্বেতা প্যাটেল জানিয়েছেন, এরকম ঘটনা খুবই বিরল। একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হয়তো তার সারাজীবন অপেক্ষা করেও এমন গর্ভবতীর সন্ধান পাবেন, তার নিশ্চয়তা নেই।
এদিকে কেলসির সন্তান প্রসব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক রিচার্ড ডেভিস। তার দাবি, বিশ্বের বিশ্বের শূন্য দশমিক তিন শতাংশ নারীর মধ্যে দুটি জরায়ু রয়েছে। তবে তাদের ক্ষেত্রে পৃথকভাবে দুটি সন্তানের জন্ম দেওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ অনেক ক্ষেত্রে একটি জরায়ু নিষ্ক্রিয় থাকে।
অধ্যাপক রিচার্ড ডেভিস আরও বলেন, এই ধরনের ঘটনায় অন্তঃসত্ত্বা নারীর সফলভাবে বাচ্চা প্রসবের চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি। কারণ একই সঙ্গে দুটি শিশুর জন্ম হবে, যে চাপ সহ্য করতে না পেরে প্রসূতির মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আবার কিছু ক্ষেত্রে গর্ভে থাকা সন্তানেরও মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, এক্ষেত্রে একসঙ্গে দুটি সন্তানের জন্ম না দেওয়াই ভালো। একটি শিশুর জন্মের পর কয়েকদিনের বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা করতে হবে। কেলসির চিকিৎসক বলেন, বিজ্ঞানের পরিভাষায় শিশু দুটিকে যমজ বলা যাবে না। কিন্তু আমার মতে তারা যমজই।
তবে প্রসব জটিলতা নিয়ে মোটেও উদ্বিগ্ন নন কেলসি হ্যাচার। ব্যতিক্রমী মাতৃত্ব উপভোগ করতে অধির আগ্রহ নিয়ে রয়েছেন তিনি। বলেন, আগেও তিনবার মা হয়েছি। কিন্তু এবারের বিষয়টা সম্পূর্ণ আলাদা।
‘এবারই আমার সন্তান প্রসবের দিকে তাকিয়ে আছে গোটা চিকিৎসক মহল। অনেকেই আলাদাভাবে আমার খোঁজ-খবর নিচ্ছেন ও খেয়াল রাখছেন। এটি একটি বিরল ও রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা বটে।’
২০১৯ সালে বাংলাদেশে আরিফা সুলতানা নামের ২০ বছর বয়সী এক তরুণীর দেহে দুটি জরায়ু শনাক্ত হয়। তিনি ২৬ দিনের ব্যবধানে দুটি সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন।