পাচারের শিকার এক মার্কিন কিশোরীকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং তার কথিত ধর্ষকের পরিবারকে দেড় লাখ মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ প্রদানের আদেশ দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পোল্ক কাউন্টি জেলা বিচারক ডেভিড এম পোর্টার নিবিড়ভাবে তত্ত্বাবধানের পর মঙ্গলবার এই রায় ঘোষণা করেন।
পিপার লুইস ১৫ বছর বয়সে তাকে ধর্ষণের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাত করেছিল। ২০২০ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া অঙ্গরাজ্যের ডেস মইনসে ঘটনাটি ঘটে। ৩৭ বছর বয়সী জাচারি ব্রুকসকে নৃশংসভাবে হত্যার জন্য প্রাথমিকভাবে তাকে অভিযুক্ত করা হয়। লুইসের বয়স এখন ১৭।
পরে সে অনিচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ড এবং ইচ্ছাকৃত আঘাতের জন্য দোষ স্বীকার করে। উভয় অভিযোগেই ১০ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। কিন্তু লুইসের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং ব্রুকসের পরিবারকে দেড় লাখ মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়।
বিচারক পোর্টার ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদানের ব্যাপারে বলেছেন, ‘এই আদালতে অন্য কোনো বিকল্প নেই। ’ যদি লুইস এই আদেশ অমান্য করে তাহলে তার ২০ বছরের সাজা হতে পারে বলে জানা গেছে। আইওয়া রাজ্যের আইনের অধীনে ক্ষতিপূরণ প্রদান বাধ্যতামূলক, যা আইওয়া সুপ্রিম কোর্ট দ্বারা ঠিক করা হয়েছে।
জানা গেছে, ব্রুকসকে ৩০ বারের বেশি ছুরিকাঘাত করেছিল লুইস। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লুইস তাকে দত্তক নেওয়া মায়ের সাথে কাটানো অপমানজনক জীবন থেকে বাঁচতে পলাতক ছিল।
পাচারের শিকার হওয়ার আগে ডেস মইনস ভবনের হলওয়েতে ঘুমাচ্ছিল লুইস। তখন ২৮ বছর বয়সী একটি লোক তাকে নিয়ে যান এবং যৌনতার জন্য জোর করে অন্য একজনের কাছে পাচার করেন।
লুইস বলেছে, হত্যার আগের সপ্তাহগুলোতে ব্রুকস তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেছেন। ২৮ বছর বয়সী লোকটি লুইসকে ছুরি দেখিয়ে ব্রুকসের অ্যাপার্টমেন্টে যেতে বাধ্য করেছিলেন।
লুইস জানিয়েছিল, তাকে বারবার ধর্ষণ করার কারণে সে ক্ষিপ্ত ছিল। তাই বিছানার পাশের টেবিল থেকে একটি ছুরি নিয়ে ব্রুকসকে আঘাত করে সে।
জানা গেছে, পুলিশ এবং বিচারকরা লুইসকে যৌন হয়রানি বা পাচার করার ব্যাপারে কোনো বিতর্ক করেননি।
বিচারকরা যুক্তি দিয়েছেন, ছুরিকাঘাত করার সময় ব্রুকস ঘুমিয়ে ছিলেন। তাই তাৎক্ষণিকভাবে লুইসের কোনো বিপদ ছিল না। এ ছাড়া ব্রুকসকে হত্যার কারণে তার বাচ্চারা পিতৃহীন হয়েছে। লুইস যেমন নিজেকে ভুক্তোভোগী দাবি করছে তেমনি বাচ্চাগুলোরও কাউকে দায়িত্ব নিতে হবে।
এদিকে আইওয়া যুক্তরাষ্ট্রের এমন একটি রাজ্য যেখানে পাচারের শিকার ব্যক্তিদের সুরক্ষা দিতে কোনো নিরাপদ আশ্রয় আইন নেই।
গ্রেপ্তারের পরের অবস্থা বর্ণনা করে কিশোরীটি বলেছে, জেলের পরিবেশের সাথে তাকে লড়াই করতে হয়েছে। সেখানে তার সাথে ভাঙা কাচের মতো আচরণ করা হতো। সে সময় বন্ধু বা পরিবারের কারো সাথে যোগাযোগ করতেও দেওয়া হয়নি তাকে।
সে আরো বলেছে, ‘আমার আত্মা পুড়ে গেছে এবং এখনো জ্বলছে। আমার গর্জন শুনুন, আমাকে জ্বলতে দেখুন এবং আমাকে বেড়ে উঠতে দেখুন। আমি এখনো বেঁচে আছি। ’
লুইস তার অপরাধের পক্ষে বলেছে, ‘আমি একজন ব্যক্তির জীবন নিয়েছি। সেদিন আমার উদ্দেশ্য ছিল না কারো জীবন নেওয়া। আমার মনে হয়েছিল আমি নিরাপদ নই। আমি অনুভব করেছি যে আমি বিপদে রয়েছি। যার ফলশ্রুতিতে এই ঘটনা ঘটে এবং একটি অপরাধ সংঘটিত হয়। ’
বিচারক পোর্টার তাকে বলেছেন, ‘আপনার জীবনের পরবর্তী পাঁচ বছর এমন নিয়মে পূর্ণ হবে যা আপনি চান না, আমি নিশ্চিত। এটি দ্বিতীয় সুযোগ, যা আপনি চেয়েছেন। তৃতীয় আর কোনো সুযোগ পাবেন না। ’
আইওয়া অর্গানাইজেশন ফর ভিকটিম অ্যাসিস্ট্যান্সের কার্ল শিলিং বলেছেন, পাচারের শিকারদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় আইন তৈরি করতে একটি বিল এ বছরের শুরুতে আইওয়া হাউসে পাস হয়েছিল। কিন্তু আইন প্রয়োগকারী গোষ্ঠীগুলোর উদ্বেগের কারণে তা সিনেটে স্থগিত হয়ে যায়।