জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে ইসরায়েলি পুলিশের অভিযানের পর ইসরায়েলে রকেট হামলা হয়। পাল্টা জবাব হিসেবে লেবানন ও গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলার পরে ইসরায়েলেও একাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছে। তাতে অন্তত চারজন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে একজন পর্যটকও রয়েছে।
লেবানন ও গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলার একদিন পরেই তেল আবিবে ও দখলকৃত পশ্চিম তীরে দুটি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলায় একজন ইটালিয়ান নাগরিক ও দুই ব্রিটিশ-ইসরায়েলি বোন নিহত হয়েছে। পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে গাড়ি হামলাকারীও।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, তেল আবিবের একটি সৈকতের কাছে গাড়ি হামলা চালানো হলে ইটালিয়ান একজন পর্যটক নিহত হন। সেই সময় আহত হয়েছে আরও অন্তত সাতজন। পুলিশের গুলিতে হামলাকারীও সেই সময়ে নিহত হয়।
এর আগে দখলকৃত পশ্চিম তীরে একটি হামলায় দুই ব্রিটিশ-ইসরায়েলি বোন নিহত আর তাদের মা গুরুতর আহত হয়। ইফরাত বসতির মেয়র জানিয়েছেন, দুই বোন এবং তাদের মা যুক্তরাজ্য থেকে অভিবাসী হয়ে ইসরায়েলে এসেছিলেন এবং সেখানে বসবাস করতে শুরু করেছিলেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ওই এলাকার সড়কগুলো ব্লক করে দিয়ে হামলাকারীদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে। দক্ষিণ লেবানন এবং গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো হামলা শুরু করার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এসব হামলার ঘটনা ঘটলো।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, গত ১৭ বছরের মধ্যে ইসরায়েলের ওপর চালানো সবচেয়ে বড় রকেট হামলার পাল্টা জবাব হিসাবে তারা ওই বিমান হামলা চালিয়েছে। সেজন্য তারা দায়ী করেছে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসকে।
পূর্ব-জেরুজালেমে আল-আকসা মসজিদে দুই রাত ধরে ইসরায়েলি পুলিশ অভিযান চালানোর পর ওই রকেট হামলা চালানোর ঘটনা ঘটে। আল-আকসা মসজিদে পুলিশের অভিযান পুরো অঞ্চল জুড়ে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
সর্বশেষ গাড়ি হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ। ৪৫ বছর বয়সী একজন ব্যক্তি গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে তিনি শহরের বেঞ্চসাইড ব্রডওয়াকে কয়েকজন পথচারীর ওপর গাড়ি উঠিয়ে দেন।
পুলিশ জানিয়েছে, সেই সময় কাছাকাছি একটি পেট্রোল স্টেশনে থাকা একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছুটে যান। তিনি দেখতে পান যে, ‘’চালক রাইফেল সদৃশ কিছু একটা বের করার চেষ্টা করছে এবং তখন তিনি গুলি করেন।‘’
ইসরায়েলি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস জানিয়েছে, ওই ঘটনায় একজন নিহত আর সাতজন আহত হয়েছে, যাদের সবাই পর্যটক।
এর আগে শুক্রবার সকালে দুই বোনের নিহত হওয়ার ঘটনাটি ঘটে জর্ডান ভ্যালিতে। প্রথমে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছিল যে, ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি দুটি গাড়ির সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। তবে ঘটনাস্থলে গিয়ে সেনা সদস্যরা ইসরায়েলি গাড়িটিতে অসংখ্য গুলির চিহ্ন দেখতে পায়। কালাশনিকভ রাইফেল দিয়ে গুলি করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইউনাইটেড হাৎযালাহ অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের একজন কর্মী জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে তারা গাড়ির ভেতরে তিনজন যাত্রীকে গুরুতর আহত অবস্থায় দেখতে পান।
জেরুজালেমের দক্ষিণে দখলকৃত পশ্চিম তীরের বসতি ইফরাতের মেয়র ওডেড রিভিবি জানিয়েছেন, এই পরিবারটি যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে অভিবাসী হয়ে ইসরায়েলে এসেছিল। ছুটি কাটাতে গালিলি সাগরের তীরে তিবেরিয়াস শহরের দিকে যাওয়ার সময় তারা ওই হামলার শিকার হয়।
এই ঘটনার পর যেসব ইসরায়েলির বন্দুকের লাইসেন্স আছে, তাদের সবসময় অস্ত্র বহন করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন ইসরায়েলি পুলিশ কমিশনার কোবি শাবতাই।
এই হামলা দায়দায়িত্ব স্বীকার করেনি হামাস। তবে যারা হামলা করেছে, তাদের প্রশংসা করে বলেছে, আল-আকসা মসজিদে যে অপরাধ ঘটে চলেছে, লেবানন এবং গাজায় যে বর্বর হামলা চালানো হচ্ছে, তার স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া এই হামলা। এই বছরের শুরু থেকেই ইসরায়েল আর ফিলিস্তিনিদের মধ্যে একের পর এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।
ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ৯০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে বেসামরিক ব্যক্তিরাও রয়েছে। সর্বশেষ এই হামলা যদি ফিলিস্তিনিদের হয়ে থাকে, তাহলে এ নিয়ে ১৭ ইসরায়েলি আর একজন ইউক্রেনিয়ান নিহত হয়েছে।