ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ হামলা অব্যাহত রেখেছে দখলদার ইসরায়েল। সোমবার পৃথক ইসরায়েলি হামলায় দুই গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন আলজাজিরার সাংবাদিক হোসাম শাবাত। তিনি মৃত্যুর আগ মুহূর্তেও সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। ইসরায়েলি দখলদারদের ভয় উপেক্ষা করে সহকর্মীদের চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করছিলেন শাবাত।
আল-জাজিরার সাংবাদিক হোসাম শাবাত নিহত হয়েছেন উত্তর গাজায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা সংবাদমাধ্যমটিকে জানিয়েছেন, বেইত লাহিয়ার পূর্ব অংশে তার গাড়ি লক্ষ্যবস্তু করে আঘাত হানে ইসরায়েলি সেনারা।
ওই দিন সংবাদ সংগ্রহে যাওয়ার আগে একটি বার্তা লিখেন শাবাত। তার মৃত্যুর পর সহকর্মীরা সেটি হোসাম শাবাতের এক্স-অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করেন।
হোসাম শাবাতের এক্স-অ্যাকাউন্টের পোস্টে লেখা হয়, “হোসামের টিম বলছি। আমরা তার শেষ বার্তাটি শেয়ার করছি।” এরপর নিচে হোসামের বার্তাটি তুলে ধরা হয়।
শাবাত ওই বার্তায় লিখেন, “যদি আপনি এটি পড়েন, তাহলে এর অর্থ হলো আমি নিহত হয়েছি। সম্ভবত ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর দ্বারা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছি।”
শাবাত লিখেছেন, গত ১৮ মাসের যুদ্ধে তিনি ‘প্রতিটি মুহূর্ত’ তার জনগণের জন্য উৎসর্গ করেছেন।
“আমি উত্তর গাজার ভয়াবহতা মিনিটে মিনিটে নথিভুক্ত করেছি। তারা যে সত্যকে কবর দেওয়ার চেষ্টা করেছিল তা বিশ্বকে দেখানোর জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমি ফুটপাতে, স্কুলে, তাঁবুতে- যেখানেই পারি ঘুমিয়েছি। প্রতিটি দিন ছিল বেঁচে থাকার লড়াই। আমি মাসের পর মাস ধরে ক্ষুধা সহ্য করেছি, তবুও আমি কখনও আমার জনগণের পক্ষ ত্যাগ করিনি।
আল্লাহর কসম, একজন সাংবাদিক হিসেবে আমি আমার কর্তব্য পালন করেছি। সত্য প্রকাশের জন্য আমি আমার সবকিছু ঝুঁকির মুখে ফেলেছি। এখন অবশেষে আমি বিশ্রামে আছি। এমন বিশ্রাম যা আমি গত ১৮ মাসে করিনি। আমি সাংবাদিকতা করেছি কারণ আমি ফিলিস্তিনিদের স্বার্থে বিশ্বাস করি। আমি বিশ্বাস করি- এই ভূমি আমাদের এবং এটিকে রক্ষা করতে। এর জনগণের সেবা করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করা আমার জীবনের সর্বোচ্চ সম্মান।
আমি এখন তোমাদের কাছে অনুরোধ করছি- গাজা নিয়ে কথা বলা বন্ধ করো না। বিশ্বকে চোখ ফিরিয়ে নিতে দিও না। লড়াই চালিয়ে যাও, আমাদের গল্প বলতে থাকো – যতক্ষণ না ফিলিস্তিন স্বাধীন হয়।”