English

26 C
Dhaka
মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ১৭, ২০২৪
- Advertisement -

ইরান-পাকিস্তান সংঘাত কি যুদ্ধে রূপ নেবে?

- Advertisements -

পাকিস্তানের ভেতরে ‘জঙ্গি গোষ্ঠীর ঘাঁটি’ লক্ষ্য করে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় অনেকেই ‘বিস্মিত’ হয়েছেন। এর একটি বড় কারণ হচ্ছে, এ দুটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিবেশী দেশকে আপাতদৃষ্টিতে পরস্পরের ‘ভ্রাতৃপ্রতিম ও বন্ধু’ বলেই মনে হয়।

কিন্তু বিষয়টি পুরোপুরি সেরকম নয়। পাকিস্তানের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক সবসময় চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে গেছে। যদিও ২০২১ সাল থেকে এই সম্পর্ক অনেকটাই স্থিতিশীল।

পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে ঐতিহাসিক কিছু বিরোধ রয়েছে। এর একটি বড় কারণ হচ্ছে ধর্ম। ইরান মূলত শিয়া মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র। অন্যদিকে পাকিস্তান হচ্ছে সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ। বিভিন্ন সময় শিয়া-সুন্নি উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে নানা হত্যাকাণ্ডও ঘটেছে।

উদ্বেগ রয়েছে সীমান্ত অঞ্চলে জঙ্গি কর্মকাণ্ড নিয়েও। ইরান-পাকিস্তান উভয়ে দীর্ঘদিন ধরে একে অপরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করে আসছে।

ইরানের একটি প্রদেশ সিস্তান-বেলুচিস্তান। এর ঠিক পাশেই রয়েছে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশ। ব্রিটিশ শাসনামলের শেষের দিকে পাকিস্তানের বেলুচিস্তানকে দুটি অংশে ভাগ করা হয়, যার একটি অংশ ইরানের অধীনে চলে যায়।

ইরান কেন আক্রমণ করেছে?
তেহরান মনে করে, পাকিস্তানের বেলুচিস্তান থেকে জঙ্গিরা এসে ইরানের সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশে হামলা করছে।

অন্যদিকে পাকিস্তানও মনে করে, বালুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন যোগাচ্ছে ইরানের গোয়েন্দারা। পাকিস্তান অংশে বালুচরা আলাদা একটি রাষ্ট্র গঠন করতে চায়।

গত বছর ইরানের ভেতরে বেশ কয়েকটি জঙ্গি হামলা হয়েছে। সবশেষ গত ডিসেম্বরে একটি পুলিশ স্টেশনে অতর্কিত হামলায় ১১ নিরাপত্তাকর্মী নিহত হয়েছেন।

ইরানের কর্মকর্তারা দাবি করেছিলেন, এসব হামলাকারী পাকিস্তানের ভেতর থেকে এসেছিল।

একইভাবে, পাকিস্তানের ভেতরেও গত বছর দুটি আক্রমণ হয়েছিল, যেখানে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা মারা যান। এই হামলার উৎপত্তিস্থল ইরানের ভেতরে ছিল বলে দাবি করে পাকিস্তান।

পাকিস্তান ও ইরানের সীমান্তের ভেতরে ‘জঙ্গি কর্মকাণ্ড’ দেশ দুটির জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে শিয়া-সুন্নি বিরোধ। পাকিস্তানে বিভিন্ন সময় শিয়াদের লক্ষ্য করে হামলা হয়। এটি ইরানের মধ্যে একটি চাপা ক্ষোভ তৈরি করেছে বহুদিন ধরে।

তলে তলে বিরোধ
কুয়ালালামপুরে মালয় ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও সমর বিশেষজ্ঞ সৈয়দ মাহমুদ আলী মনে করেন, নানা চাপের কারণে পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে সম্পর্ক দৃশ্যত ভালো মনে হতো। কিন্তু ভেতরের পরিস্থিতি আসলে সেরকম নয়।

তিনি বলেন, ইরান ও পাকিস্তান পরস্পরের মধ্যে একটি ‘রাজনৈতিক সম্পর্ক’ বজায় রেখে চলেছে।

সম্প্রতি ইসরায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের ‘গোপন আস্তানা’ টার্গেট করে সিরিয়ার ইদলিব এবং ইরাকের কুর্দিস্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। এছাড়া, লোহিত সাগরে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কিত জাহাজে হুথি বিদ্রোহীরা সেসব হামলা চালাচ্ছে, তাতে ইরানের সংযোগ রয়েছে বলে মনে করে পশ্চিমারা।

প্রশ্ন হচ্ছে, গত কয়েকদিনে ইরান একাধিক হামলায় জড়িয়েছে কেন?

কয়েক বছর যাবৎ ইরানের বিরুদ্ধে নানা তৎপরতা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্র ইসরায়েল। ইরানের ভেতরে-বাইরে অনেক আক্রমণ হয়েছে। ইরানের শীর্ষ কমান্ডার কাশেম সোলাইমানিকে যুক্তরাষ্ট্র হত্যা করেছে ইরাকের মাটিতে।

অন্যদিকে, ইরানের ভেতরে দেশটির শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী আহমেদ ফখরেজাদেকে হত্যা করা হয়েছে। এজন্য ইরান অভিযুক্ত করেছে ইসরায়েলকে। তাছাড়া পাকিস্তান সীমান্তেও ইরানবিরোধী নানা তৎপরতা চলছে।

মাহমুদ আলীর মতে, ইরান মূলত একটি বার্তা দিতে চাচ্ছে। তারা তাদের সাধ্যমতো লড়াই করবে। ইরান রাষ্ট্রকে জনসাধারণের কাছে প্রমাণ করতে হবে যে, তারা দেশের স্বার্থরক্ষা করতে পারে এবং তাদের সেই সামর্থ্য রয়েছে।

ইরানের পর্যবেক্ষকরাও মনে করেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাত বাড়ানো ইরানের জন্য ঠিক হবে না। বিবিসি পার্সিয়ান ওয়েবসাইটে মোহাম্মদ ওয়াজিরি এক নিবন্ধে লিখেছেন, ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে নানাবিধ সমস্যা থাকলেও এ দুই দেশ পরস্পরের ঘনিষ্ঠ।

সেজন্য বুধবার ইরান যে হামলা চালিয়েছে সেটি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। আফগানিস্তান নিয়ে পাকিস্তানের যেমন সমস্যা ছিল, তেমনি ইরানেরও সমস্যা ছিল। ভারতের সঙ্গে সীমান্তে পাকিস্তানের সমস্যা রয়েছে। ইরানেরও তাদের পশ্চিম সীমান্ত নিয়ে সমস্যা রয়েছে।

এসব কারণে পাকিস্তান ও ইরান সীমান্তে বড় ধরনের উত্তেজনা তৈরি থেকে দু’দেশের বিরত থাকা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন মোহাম্মদ ওয়াজিরি।

যুদ্ধে মোড় নেবে?
পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে যা ঘটেছে, তা হলো শক্তি প্রদর্শনের হামলা। কাউকে ধরাশায়ী করার জন্য নয়। এটি একটা রাজনৈতিক বার্তাও বটে।

সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, আপনি যে আপনার বৈরী রাষ্ট্রের সীমান্ত অতিক্রম করে হামলা চালাতে পারেন, এটি সেই বার্তা দিচ্ছে নিজ দেশের জনগণ ও বৈরী রাষ্ট্রর প্রতি। উভয় দেশ পরস্পরের প্রতি তাদের সামর্থ্য দেখাতে চাইছে। পাকিস্তানের পাল্টা হামলার পর ইরান যদি আবারও আক্রমণ করে, তাহলে পাকিস্তান আরও জোরালো আক্রমণ করবে। সেক্ষেত্রে সংঘাত ছড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এ সমর বিশেষজ্ঞ।

তার কথায়, আপনি আমাকে একটা ঘুসি মেরেছেন, আমি আপনাকে পাল্টা আরেকটা ঘুসি মেরেছি। এই শক্তি প্রদর্শনের বিষয়টা যদি ওখানে শেষ হয়ে যায়, তাহলে ব্যাপারটা এখানেই শেষ হয়ে যাবে।

মাহমুদ আলীর মতে, বিষয়টি এখন ইরানের হাতে। ইরান যদি আবারও হামলা চালায়, তাহলে সংঘাত ছড়িয়ে পড়তে পারে। আর ইরান-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে সমর্থন দেবে বলে মনে করেন তিনি।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন