সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগে জামশিদ শারমাহদকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে ইরানের সর্বোচ্চ আদালত। তবে অধিকারকর্মী ও জার্মান রাজনীতিবিদরা এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছেন।
এদিকে, কারাগারে বন্দি জার্মান-ইরানি নাগরিক জামশিদ শারমাহদের মৃত্যুদণ্ডের ‘তীব্র নিন্দা’ জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
২০০৮ সালে ইরানে সন্ত্রাসী হামলার জন্য শারমাহদকে দায়ী করা হয়। তেহরানের সুপ্রিম কোর্ট গত বুধবার তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে আদালত তার মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়। এই শাস্তি কবে কার্যকর হবে তা স্পষ্ট নয়।
শুক্রবার এই রায়ের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ইইউ পররাষ্ট্র নীতি প্রধান জোসেপ বোরেলের কার্যালয়। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর না করে শারমাহদের সাজা বাতিল এবং মৌলিক অধিকার নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।
৬৮ বছর বয়সি শারমাহদের মেয়ে তার গাজেল শারমাহদ চলতি সপ্তাহে ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, তাকে আইনজীবী পাওয়ার অধিকার দেয়া হয়নি। এমনকি কাউকে দেখা করার সুযোগ দেয়া হয়নি। পার্কিনসন রোগের জন্য তার প্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবস্থাও নেই বলে অভিযোগ করেন তিনি। গাজেল জানান, কয়েক বছর ধরে বাবার সঙ্গে কথা বলতে পারেননি তিনি।
ইইউ ইরানকে যেকোনো মৃত্যুদণ্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। বিবৃতিতে ইইউ বলেছে, ‘মৃত্যুদণ্ডের বিলুপ্তির প্রতি একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতিঅনুসরণ করে এই সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক নিয়মগুলো ইরানের কঠোরভাবে মেনে চলা উচিত।’ সেই সঙ্গে ভিয়েনা কনভেনশনের কথাও ইরানকে মনে করিয়ে দিয়েছে ইইউ।
ইরানে ‘নির্বিচারে আটক ইইউ নাগরিক এবং দ্বৈত নাগরিকদের পরিস্থিতি সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করা হয়েছে বিবৃতিতে।
পরিবারের সঙ্গে শৈশবেই জার্মানিতে আসেন শারমাহদ। তার কাছে এখন জার্মান পাসপোর্ট রয়েছে। তেহরানে জন্মগ্রহণ করায় তার ইরানের নাগরিকত্বও রয়েছে।
২০২০ সালে গ্রেফতার হওয়ার আগে শারমাহদ কয়েক বছর যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। শারমাহদের পরিবারের অভিযোগ, দুবাইতে একটি যাত্রাবিরতির সময়ে ইরানের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তাকে এখতিয়াবহর্ভূতভাবে অপহরণ করেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টোন্ডার নামে একটি দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন শারমাহদ। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি আমেরিকা ভিত্তিক একটি ‘জঙ্গি গোষ্ঠীর’ নেতা যারা ইরানে নাশকতা চালায়। তারা ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবকে ব্যর্থ করে আবার পশ্চিমা দেশগুলির সমর্থনে রাজতন্ত্র কায়েম করতে চায় বলে অভিযোগ তেহরানের।
ইরানের বিচার বিভাগ ২০০৮ সালে শিরাজ শহরের একটি মসজিদে হামলার জন্য গোষ্ঠীটিকে দায়ী করে। এই ঘটনায় ১৪ জন নিহত ও ২০০ জনের বেশি আহত হন। টোন্ডারকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসাবে উল্লেখ করে ইরান।