মার্কিন রাজনীতিবিদ ও তাদের মতাদর্শীরা ইরাক দখলের ভিত্তি স্থাপন করতে শুরু করেছিলেন অভিযান শুরু করার কয়েক বছর আগেই। ১৯৯০ সালে প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম তেল-সমৃদ্ধ প্রতিবেশী কুয়েতে আক্রমণ করেন। এরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচডব্লিউ বুশ, জুনিয়র বুশের বাবা ইরাকে ‘উদার গণতন্ত্র’ চাপিয়ে দেওয়ার তার অভিপ্রায় ঘোষণা করেন। এটি মার্কিন নব্য রক্ষণশীল রাজনীতিবিদদের জন্য একটি সুযোগ করে দেয় যে সাদ্দামকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে।
২০০১ সালের ৯/১১ হামলার পর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ, যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্তকে আরও পাকাপোক্ত করে। সেই সঙ্গে ইরাকসহ এই অঞ্চলকে উদারীকরণ ও গণতান্ত্রিক করার জন্য আদর্শিক উদ্দেশ্যের মিশ্রণ ঘটায় যুক্তরাষ্ট্র।
আমেরিকান, ব্রিটিশ ও অন্যান্য জোট বাহিনীর সদস্যরা ২০০৩ সালের ২০ মার্চ কুয়েত থেকে ইরাকে আক্রমণ শুরু করে। ইরাকি সামরিক বাহিনীকে দ্রুত চূর্ণ করে ফেলে তারা এবং সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়।
হামলার তিন সপ্তাহ পর ৯ এপ্রিল মার্কিন সেনারা বাগদাদ নিয়ন্ত্রণে নেয়। ইরাকি বেসামরিক নাগরিকদের সঙ্গে নিয়ে তারা বাগদাদের ফিরদোস স্কোয়ারে সাদ্দামের একটি ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে। একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত এটি যা মার্কিন বিজয়ের প্রতীক হয়ে ওঠে পরবর্তীতে। এরপর ১ মে বুশ ‘মিশন সম্পন্ন’ ঘোষণা করেন এবং ইরাকে প্রধান অভিযান শেষ করেন।
২০০৩ সালের শেষ দিকে, মার্কিন সেনারা সাদ্দামকে তিকরিতে তার শৈশবের বাড়ির কাছে থেকে গ্রেফতার করেন। পরে ইরাকের একটি আদালতে তার বিচার করা হয় এবং গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
সাদ্দামের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য বেছে নেওয়া হয় ২০০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর দিনটিকে। যেটি মুসলমানদের ঈদ-উল-আজহা পালনের দিন ছিল। এখনো সেটি নিয়ে বিতর্ক আছে।
সাদ্দামের বন্দী হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই, ‘বুশ প্রশাসন স্বীকার করে ইরাকে রাসায়নিক, জৈবিক ও পারমাণবিক অস্ত্রের মজুত থাকার বিষয়ে যুদ্ধ-পূর্ব যুক্তি ভিত্তিহীন ছিল। ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল কমিশন উপসংহারে পৌঁছেছিল যে ইরাকি ডব্লিউএমডি সম্পর্কে মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য সম্পূর্ণ ত্রুটিপূর্ণ ছিল।’