ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সময় ভোরে এই অভিযান শুরু হয়। এ নিয়ে সারাবিশ্বে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
এদিকে, যুদ্ধের মধ্যে আবার আলোচনায় পুতিনের ব্যক্তিগত জীবন। পুতিনের কথিত বান্ধবী আলিনা কাবায়েভাকে নিয়ে অনেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিভিন্ন পশ্চিমা গণমাধ্যম।
ব্যক্তিগত জীবনে পুতিনকে খুবই রোমান্টিক বলা হয়। প্রায় এক দশক ধরে তার নাম আলিনা কাবায়েভার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তিনি একজন জিমন্যাস্ট। ৩৮ বছর বয়সী কাবায়েভা অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জিতেছেন। তাকে পুতিনের যমজ সন্তানের মা বলেও মনে করা হয়।
লুদমিলার সঙ্গে বিচ্ছেদ
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও লুদমিলা দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর এক ছাদের নিচে ছিলেন। অবশেষে ২০১৪ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়। অনেক ধরেই গুঞ্জন চলছিল তাদের বিচ্ছেদের। যদিও পুতিন-লুদমিলা আলাদা হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন ২০১৩ সালের জুনে। ২০১৪ সালের এপ্রিলের শুরুতে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়া হয় তাদের বিচ্ছেদের বিষয়ে।
তখন পুতিন বলেছিলেন, “এটা তাদের যৌথ সিদ্ধান্ত।” আর লুদমিলা বলেছিলেন, “আমাদের বিচ্ছেদ হচ্ছে। কারণ, আমরা প্রায় কখনওই কেউ কাউকে বুঝিনি।”
লুদমিলা তাদের আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্তকে ‘মার্জিত বিচ্ছেদ’ বলেও আখ্যা দেন তখন। লুদমিলা-পুতিন দম্পতির দুটি কন্যাসন্তান রয়েছে।
পরে পশ্চিমা গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, কিছু দিন পর নিজের চেয়ে ২০ বছরের কম বয়সী একজনকে বিয়ে করেছেন লুদমিলা।
কাবায়েভার সঙ্গে কত দিনের সম্পর্ক পুতিনের?
২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো পুতিনের সঙ্গে আলিনা কাবায়েভার নাম জড়ায়। মিডিয়া টাইকুন এবং সাবেক কেজিবি স্পাই আলেকজান্ডার লেবেদেভের মস্কো থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্র এ দাবি করে। ২০১৩ সালে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ৩০ বছর সংসারের পর স্ত্রী লুদমিলাকে ডির্ভোস দেন। এরপর আলিনাকে ‘রাশিয়ার ফার্স্ট লেডি’ বলা শুরু হয়। তারপরে তিনি প্রকাশ্যে পুতিনের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি অস্বীকার করেন। কিন্তু থেমে থাকেনি তাদের সম্পর্কের গুঞ্জন। বলা হয় যে, দু’জনেই গোপনে বাগদান করেছিলেন এবং তারপর বিয়েও করেন। এরপর পারিবারিক অনুষ্ঠানও হয়েছিল।
২০১৬ সালে, আলিনাকে জনসমক্ষে একটি আংটি পরতে দেখা যায়, যা তখন তাকে ক্যামেরার চোখ থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতেও দেখা যায়। এরপর অনেক অনুষ্ঠানে তিনি তার সেই আংটি নিয়ে হাজির হন। যা গুজবকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
২০১৭ সালে আলিনা অন্তঃসত্ত্বা বলে গুজব রটে। আসলে, তখন তিনি একটি জিমন্যাস্টিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে এসেছিলেন। সেখানে তাকে একটি ঢিলেঢালা ফিটিং লাল পোশাকে দেখা গেছে। তখন বলা হয়- বেবি বাম্প লুকানোর জন্য তিনি ওই পোশাকটি পরেছিলেন।
পুতিনের ফের বিয়ের খবর
এরপর রাশিয়ার একটি পত্রিকা তাদের প্রতিবেদনে আলিনা ও পুতিনের বাগদানের খবর প্রকাশ করে। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। পুতিন এবং আলিনার সন্তানদের নিয়ে আলোচনা শুরু হয় যখন তাদের দু’জনের ছবি একসঙ্গে প্রকাশ পেতে শুরু করে। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট তার পরিবার ও ব্যক্তিগত জীবনের কথা সবসময় গোপন রেখেছেন।
কে এই আলিনা কাবায়েভা?
তার পুরো নাম আলিনা মারাতোভনা কাবায়েভা। তিনি একজন রাশিয়ান রাজনীতিবিদ, মিডিয়া ম্যানেজার এবং অবসরপ্রাপ্ত জিমন্যাস্ট। আলিনার জন্ম ১২ মে, ১৯৮৩ সালে। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ উজবেকিস্তানে। তার পরিবারের সদস্যরা খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আলিনার বাবা মারাত কাবায়েভা ছিলেন একজন পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড়। বাবার মতো আলিনাও খেলাধুলায় ক্যারিয়ার গড়তে শুরু করেছিলেন। মাত্র তিন বছর বয়সে। আলিনাকে রিদমিক জিমন্যাস্টের উদীয়মান তারকা হিসেবে দেখা হয়েছিল। ২০০০ সালে সিডনির অ্যাথেন্স গেমসে আলিনা জিমন্যাস্টে ব্রোঞ্জ পদক জেতেন। তারপরে তিনি ২০০৪ স্বর্ণপদকও জেতেন। আলিনাকে অন্যতম সফল জিমন্যাস্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি তার ক্যারিয়ারে দুটি অলিম্পিক পদক, ১৪টি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ২১টি ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ পদক জিতেছেন।
খেলাধুলা থেকে অবসর নেওয়ার পর আলিনা রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তাকে ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টি থেকে সংসদ সদস্য করা হয়েছিল। এরপর তাকে জাতীয় গণমাধ্যম গ্রুপের চেয়ারপার্সন করা হয়। তথ্যসূত্র: মার্কা, মিরর ইউকে, নিউ ইয়র্ক পোস্ট, এক্সপ্রেস ইউকে