গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে আটক অস্ট্রেলিয়ার লেখক ড. ইয়াং হেংজুনকে ‘স্থগিত মৃত্যুদণ্ড’ দিয়েছে চীনের একটি আদালত। ৫ বছর আগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, চীনে জন্মগ্রহণকারী অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক ও গণতন্ত্র কর্মী ইয়াং হেনজুনকে সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বেইজিংয়ের একটি আদালত এই সাজা দিয়েছে।
হেনজুনকে দেয়া ‘স্থগিত মৃত্যুদণ্ড’ হলো, অবিলম্বে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করাকে জরুরি বলে মনে করা না হলে, মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পাশাপাশি দুই বছর পর অব্যাহতি দেওয়া। তবে অস্ট্রেলীয় কর্মকর্তাদের ধারণা, দুই বছর পর তার সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে পরিণত হতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং এক বিবৃতিতে বলেছেন, অস্ট্রেলিয়া সরকার ইয়াংয়ের মুক্তির জন্য আবেদন করেছিল। এই সিদ্ধান্তে আমরা শঙ্কিত। বেইজিংকে ‘কড়া ভাষায়’ এর প্রতিক্রিয়া জানানো হবে বলেও জানান তিনি।
ওং বলেন, ‘এটি ড. হেনজুন, তার পরিবার এবং যারা তাকে সমর্থন করেছে তাদের জন্য এটি হতাশাজনক সংবাদ। আমাদের চিন্তাভাবনা তাদের সাথে রয়েছে।’
পরে তাকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। হেনজুন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তার মামলার কার্যক্রম বেশিরভাগ সময় লুকিয়েই চালানো হয়। কোন দেশের জন্য তাকে গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছিল, সে সম্পর্কে চীনা কর্তৃপক্ষ কখনো কিছু জানায়নি।
আটক অবস্থায় ইয়ং হেনজুনকে ৩০০ বারের বেশি জিজ্ঞাসাবাদ এবং ছয় মাস তীব্র নির্যাতন করা হয়েছে বলে দাবি করেছে তার পরিবার।
কারাবন্দী হেনজুন স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। গত বছর হেনজুন বলেছিলেন, তার কিডনিতে একটি বড় সিস্ট ধরা পরেছে। যার কারণে কারাগারে তিনি মারা যেতে পারেন বলে আশঙ্কা করেছিলেন।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওং তার বিবৃতিতে বলেছেন, অস্ট্রেলিয়া প্রতিটি সুযোগে এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ে চীনের সাথে হেনজুন-এর পক্ষে কথা বলেছে।
তিনি কারাগারে হেনজুনের যথাযথ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য চীনের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাকে ও তার পরিবারকে কনস্যুলার সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাবে বলেও জানিয়েছেন।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, তিনি চীনের রাষ্ট্রদূত জিয়াও কিয়ানকে সাজা ব্যাখ্যা করার জন্য তলব করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সবচেয়ে শক্তিশালী উপায়ে আমাদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে যোগাযোগ করবো। অস্ট্রেলিয়ার সব মানুষই দেখতে চায়, ড. হেনজুন তার পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলিত হোন।’
অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমানোর আগে ড. হেনজুন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতেন। গ্রেপ্তারের আগে, তিনি নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ চীন সরকারের সমালোচনামূলক ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য পোস্ট করতেন। গোয়েন্দা উপন্যাসের একটি সিরিজ লিখেছেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব নিলেও ড. হেনজুন বেশিরভাগ সময় যুক্তরাষ্ট্রে থাকতেন। নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়ায় একজন ভিজিটিং পণ্ডিত ছিলেন তিনি।