দক্ষিণ আফ্রিকার সাভানার আদি নিবাসী বিশাল আকৃতির আফ্রিকান ইঁদুরের ওজন প্রায় ১.৫ থেকে ২ কেজি এবং আকারে সাধারণ ইঁদুরের তুলনায় তিন থেকে চার গুণ বড়। অবৈধ বন্যপ্রাণী পাচার প্রতিরোধে এই ইঁদুর ব্যবহার করা যেতে পারে বলে একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে। গবেষণাটি পরিচালনা করেছে এপোপো নামের একটি অলাভজনক সংস্থা। এই প্রকৃতির ইঁদুর মূলত ভূমি মাইন ও যক্ষ্মার জীবাণু শনাক্ত করতে প্রশিক্ষিত হওয়ায় স্থানীয়দের কাছে পরিচিত ‘হিরো ইঁদুর’ নামে পরিচিত।
২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তানজানিয়ার মোরোগোরোতে পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায়, এই ইঁদুরগুলো হাতির দাঁত, গন্ডারের শিং, বনরুইয়ের আঁশ ও আফ্রিকান কাঠের গন্ধ সঠিকভাবে শনাক্ত করতে সক্ষম, এমনকি এগুলোকে অন্য জিনিসের সাথে মেশানো হলেও।
গবেষণায় বলা হয়, অবৈধ বন্যপ্রাণী পাচার প্রতিরোধে গন্ধ শনাক্তকারী প্রাণী নতুন এবং কার্যকর একটি পদ্ধতি হতে পারে। কারণ, প্রাণীগুলো জৈব পদার্থ ও মিথ্যা ছদ্মবেশের পার্থক্য সহজেই শনাক্ত করতে পারে। গবেষণায় আরও বলা হয়, শিপিং কনটেইনার স্ক্যান করতে ব্যবহার হওয়া প্রচলিত পদ্ধতিগুলি যেমন এক্স-রে, ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ। যেখানে একটি প্রশিক্ষিত কুকুরের পেছনে খরচ পড়ে প্রায় ৩০,০০০ ডলার, এবং বিমানবন্দর স্ক্যানারের দাম ৩০,০০০ থেকে ১.২ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত। অথচ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একটি ইঁদুরের খরচ মাত্র ৮,০০০ ডলার।
গবেষণা সহ-লেখক ও সিনিয়র গবেষক ইসাবেল শট বলেন, ইঁদুরের হালকা ওজনও বিশেষ ভূমিকা রাখে, কেননা এটি সহজেই উচ্চ স্থানে যেমন কনটেইনারের বায়ু চলাচল ব্যবস্থায় পৌঁছাতে পারে, যেখানে কুকুর যেতে পারে না।
গবেষকরা সতর্ক করে বলেন, যদিও গবেষণার ফলাফল আশাব্যঞ্জক, তবু এই ইঁদুরগুলো বাস্তবে মোতায়েন করতে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন। মাঠপর্যায়ে ব্যবহারের জন্য ইঁদুরগুলোকে বিশেষভাবে ডিজাইন করা একটি ভেস্ট পরানো হবে, যাতে একটি ছোট বল থাকবে, যা বীপ ধ্বনি নির্গত করবে। সন্দেহজনক বস্তু শনাক্তের সময় ইঁদুরটি তার সামনের পা দিয়ে বলটি টেনে সতর্ক সংকেত দিবে।
বিশ্বব্যাপী অবৈধ বন্যপ্রাণী পাচার বর্তমানে চতুর্থ বৃহত্তম আন্তঃদেশীয় অপরাধ অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৭ থেকে ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।