পর্দা ও পোশাক সম্পর্কিত বিধিবিধান আরও কঠোর করে নতুন একটি বিল পাস হয়েছে ইরানের পার্লামেন্টে। ‘হিজাব ও সতীত্ব বিল’ নামে ওই বিলে বলা হয়েছে, ‘অনুপযুক্ত পোশাক’ পরা বা এর পক্ষে প্রচারণা চালালে ১০ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।
গত বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) তিন বছরের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে এই নিয়ম কার্যকরের অনুমোদন দিয়েছেন ইরানের আইনপ্রণেতারা। এদিন ইরানি পার্লামেন্টে ১৫২-৩৪ ভোটে পাস হয়েছে বিলটি। ভোটদানে বিরত ছিলেন সাত আইনপ্রণেতা।
বিলটিকে আইনে পরিণত করতে এবার গার্ডিয়ান কাউন্সিলের অনুমোদন লাগবে। প্রভাবশালী এই সংগঠনের সদস্য হয়ে থাকেন খ্যাতনামা আলেম ও আইনবিদরা।
ইরানের শরিয়া আইন অনুসারে, বয়ঃসন্ধিকালের ঊর্ধ্বে নারী ও মেয়েদের অবশ্যই হিজাবে চুল ঢেকে রাখতে হবে এবং শরীর ঢাকতে হবে লম্বা, ঢিলেঢালা পোশাকে।
বিবিসি জানিয়েছে, ইরানের বর্তমান আইনে কেউ এই নিয়ম ভাঙলে ১০ দিন থেকে দুই মাসের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার থেকে পাঁচ লাখ রিয়াল জরিমানা হতে পারে।
কিন্তু, নতুন বিলে প্রকাশ্যে ‘অনুপযুক্ত পোশাক’ পরাকে ‘চতুর্থ মাত্রার’ শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
ইরানি দণ্ডবিধি অনুসারে, চতুর্থ মাত্রার শাস্তি মানে পাঁচ থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ১৮ কোটি থেকে ৩৬ কোটি রিয়াল জরিমানা (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা থেকে ৯ লাখ ৪১ হাজার টাকা প্রায়)।
আল-জাজিরা জানিয়েছে, নারীদের জন্য খোলামেলা বা আঁটসাঁট পোশাক অথবা যে পোশাকে ঘাড়ের নিচে, গোড়ালির ওপরে বা হাতের ওপরের অংশ দেখা যায়, সেগুলোকে ‘অগ্রহণযোগ্য পোশাক’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ‘হিজাব ও সতীত্ব’ বিলে।
পুরুষদের জন্য যে পোশাকে বুকের নিচে বা গোড়ালির ওপরে বা কাঁধের ওপরের অংশ দেখা যায়, সেগুলোকে খোলামেলা পোশাক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই পোশাকবিধি লঙ্ঘনকারীদের জন্য একগুচ্ছ কঠোর শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে বিলটিতে। এতে বলা হয়েছে, হিজাবের নিয়ম লঙ্ঘন করলে বিভিন্ন অংকের আর্থিক জরিমানা গুনতে হবে। তবে কোনো ব্যক্তি ‘সংগঠিত উপায়ে’ বা ‘বিদেশি বা শত্রুভাবাপন্ন সরকার, মিডিয়া, গোষ্ঠী বা সংস্থার সহযোগিতায়’ পোশাকবিধি লঙ্ঘনের প্রচার করলে পাঁচ থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
এছাড়া, কোনো ব্যবসায়ী বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ‘নগ্নতা, সতীত্বহীনতা বা পর্দাহীনতার’ প্রচারে জড়িত থাকলে বিশাল জরিমানা, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা অথবা কারাদণ্ড হতে পারে।
গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘হিজাব নিয়ে মশকরা’ করলে জরিমানার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে নতুন বিলে। কোনো গাড়ির ভেতর ‘অনুপযুক্ত পোশাক’ পরা নারী পাওয়া গেলে সেটির মালিককেও মোটা অংকের জরিমানা গুনতে হবে।
এ মাসের শুরুর দিকে জাতিসংঘের আটজন স্বাধীন মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ ইরানের নতুন বিলটিকে ‘লিঙ্গ বৈষম্যের একটি রূপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তারা বলেছেন, খসড়া আইনটি বিরুদ্ধ মতাদর্শের নারী ও মেয়েদের ওপর কঠোর শাস্তি আরোপ করে, যা এর সহিংস প্রয়োগের দিকে পরিচালিত করতে পারে।