পরীক্ষায় জালিয়াতির মাধ্যমে স্ত্রীকে সরকারি চাকরি পাইয়ে দিতে সাহায্য করেছিলেন স্বামী। কিন্তু চাকরি পাওয়ার পরই স্বামীকে বেকার বলে উপহাস করেন এবং পাঁচ মাসের মাথায় তাকে ছেড়ে চলে যান।
এ ঘটনার পর প্রতিশোধ নিতে পরীক্ষায় জালিয়াতির কথা ফাঁস করে দেন ভুক্তভোগী স্বামী। আর তাতেই অনেক সাধের চাকরিটা হারাতে হয় অকৃতজ্ঞ ওই নারীকে। সম্প্রতি চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের রাজস্থানে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়, রাজস্থানের কোটা জেলার বাসিন্দা মনীশ মীনা তার স্ত্রী আশা মীনাকে রেলের চাকরি পাইয়ে দিতে অবৈধ উপায় অবলম্বন করেন।
মনীশ জানান, তিনি রাজেন্দ্র নামে এক রেলওয়ে গার্ডের মাধ্যমে ১৫ লাখ রুপি দিয়ে এক ভুয়া পরীক্ষার্থীকে ভাড়া করেছিলেন, যিনি আশা মীনার জায়গায় পরীক্ষা দেন। এই অর্থ জোগাড় করতে তিনি নিজের কৃষিজমি বন্ধক রাখেন। কিন্তু পরে স্ত্রী তাকে ছেড়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনেন।
তার অভিযোগের ভিত্তিতে পশ্চিম মধ্য রেলওয়ের নজরদারি বিভাগ তদন্ত শুরু করে, যা পরবর্তীতে সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (সিবিআই) হাতে যায়। গত শুক্রবার সিবিআই এই কেলেঙ্কারির বিষয়ে একটি এফআইআর দায়ের করেছে।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, শুধু আশা মীনাই নন, তার মতো আরও অনেকে ভুয়া পরীক্ষার্থী ব্যবহার করে চাকরি পেয়েছেন। অর্থাৎ এ যেন কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসার জোগাড় হয়েছে।
এফআইআরে দিল্লি পুলিশের কনস্টেবল লক্ষ্মী মীনা ও রেলওয়ের পয়েন্টসওম্যান আশা মীনার নাম রয়েছে। পাশাপাশি কিছু অজ্ঞাত রেল কর্মকর্তা জড়িত থাকতে পারেন বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে।
মনীশের অভিযোগ, লক্ষ্মী মীনা ভুয়া পরীক্ষার্থী হিসেবে পরীক্ষা দেন ও শারীরিক সক্ষমতা পরীক্ষাও সম্পন্ন করেন। তিনি শুধু আশা মীনার হয়ে নয়, স্বপ্না মীনা নামে আরেক প্রার্থীর হয়েও পরীক্ষা দিয়েছিলেন। এর ফলে আশা মীনা রেলে পয়েন্টসওম্যান এবং স্বপ্না মীনা পশ্চিম মধ্য রেলওয়েতে সহকারী পদে চাকরি পান।
জানা গেছে, লক্ষ্মী মীনা নিজেও কয়েক মাস আগে দিল্লি পুলিশের কনস্টেবল হিসেবে নিয়োগ পান। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, ২০২২ সালে আঞ্চলিক রেলওয়ে নিয়োগ বোর্ডের গ্রেড-৪ পরীক্ষায় তিনি আশা মীনার হয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলেন।
মনীশ অভিযোগ করেছেন, তিনি গত আট মাস ধরে স্পেশাল অপারেশনস গ্রুপ, রেল কর্মকর্তারা এবং রেল মন্ত্রণালয়ের অনেককে বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাকে সম্প্রতি জানানো হয়েছে- আমার স্ত্রী আশা মীনা এবং রেলওয়ে গার্ড রাজেন্দ্রকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কিন্তু এখনও জব্বলপুরের সেই সিন্ডিকেটের মূল হোতাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সিবিআই এখন আরও এফআইআর দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং রেলের নিয়োগ পরীক্ষার দুর্নীতির বড় চক্র খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।