সহকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও হুমকির অভিযোগ নিয়ে বিতর্কের মুখে পদত্যাগ করেছেন যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভার সদস্য স্যার গ্যাভিন উইলিয়ামসন। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। বলেছেন, এই বিতর্ক যেন সরকারের ‘ভালো কাজ’ থেকে মানুষের নজর সরিয়ে না নেয়, সেজন্যই পদত্যাগ করছেন। খবর বিবিসির।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের মন্ত্রিসভায় দপ্তরবিহীন মন্ত্রী ছিলেন স্যার গ্যাভিন। তিনি নিজের দল কনজারভেটিভ পার্টির এক এমপি’কে আপত্তিকর মেসেজ পাঠিয়েছেন এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে হয়রানি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
তবে ‘ভুল কিছু করেননি’ দাবি করে পদত্যাগকারী এ মন্ত্রী বলেছেন, এসব অভিযোগ সরকারের ভালো কাজের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। এ কারণে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
পদত্যাগপত্রে স্যার গ্যাভিন বলেছেন, তিনি ‘সত্যিকারের দুঃখ’ নিয়ে সরকার থেকে চলে যাচ্ছেন। কিন্তু পেছনে বসে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের প্রতি পূর্ণ সমর্থন অব্যাহত রাখবেন।
পরে এক টুইটে তিনি আরও জানিয়েছেন, পদত্যাগের পর বিচ্ছেদ বাবদ কোনো অর্থ নেবেন না। এই অর্থ জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার মতো সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোতে খরচ করা উচিত।
জবাবে ঋষি সুনাক জানিয়েছেন, তিনি ‘গভীর দুঃখের সঙ্গে’ স্যার গ্যাভিনের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। এসময় ‘ব্যক্তিগত সমর্থন ও বিশ্বস্ততার’ জন্য এ কনজারভেটিভ নেতাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রথম অশ্বেতাঙ্গ প্রধানমন্ত্রী।
গত মাসে কনজারভেটিভ সহকর্মী ও তৎকালীন চিফ হুইপ ওয়েন্ডি মর্টনকে পাঠানো আপত্তিকর হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ সানডে টাইমসে প্রকাশিত হওয়ার পর তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন স্যার গ্র্যাভিন।
তার ওপর গত সোমবার এক জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে জানিয়েছেন, দপ্তরবিহীন মন্ত্রী গ্যাভিন তাকে হয়রানি করেছেন এবং ‘গলা কেটে ফেলতে’ বলেছেন।
গত মঙ্গলবার সাবেক ডেপুটি হুইপ অ্যান মিল্টন চ্যানেল ৪ নিউজকে বলেন, তার সঙ্গে স্যার গ্যাভিনের আচরণ ‘হুমকিপূর্ণ’ ও ‘ভীতিকর’ ছিল।
এর আগে, ডাউনিং স্ট্রিট বলেছিল, তারা সরকারি কর্মকর্তাদের তোলা অভিযোগের সত্যতা যাচাই করছে।
ওয়েন্ডে মর্টনের কাছে স্যার গ্যাভিনের পাঠানো আপত্তিকর মেসেজের বিষয়ে ওয়াচডগ ইন্ডিপেনডেন্ট কমপ্লেইন্টস অ্যান্ড গ্রিভেন্স স্কিমের (আইসিজিএস) কাছেও অভিযোগ করা হয়েছিল।
পদত্যাগপত্রে গ্যাভিন বলেছেন, তিনি ‘এক সহকর্মীর কাছে পাঠানো মেসেজ সম্পর্কিত চলমান অভিযোগ প্রক্রিয়া’ মেনে চলবেন এবং ‘সেই মেসেজগুলোর জন্য প্রাপকের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন’।
টেক্সট মেসেজগুলোতে দেখা যায়, স্যার গ্যাভিন অভিযোগ করেছেন, যেসব এমপি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের বিপক্ষে ছিলেন, তাদের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগদান থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
এই তথাকথিত ভুক্তভোগীদের মধ্যে ছিলেন গ্যাভিন নিজেও। মেসেজে তিনি স্পষ্টতই ওয়েন্ডি মর্টনকে টিকিট বরাদ্দে ‘কারচুপি’ করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন এবং হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘সব কিছুরই মূল্য দিতে হয়।’
গত সোমবার ঋষি সুনাক বলেছেন, এসব মেসেজের ভাষা একেবারেই ‘গ্রহণযোগ্য নয়’।
এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো সরকার ছাড়তে হলো স্যার গ্যাভিনকে। ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের ৫জি নেটওয়ার্কে হুয়াওয়ের সম্ভাব্য সম্পৃক্ততার বিবরণ ফাঁস হওয়ার পরে তাকে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।
২০১৯ সালে বরিস জনসনের আমলে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে তাকে মন্ত্রিসভায় ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু এ-লেভেল পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে গোলযোগের কারণে ২০২১ সালে চাকরি হারান গ্যাভিন।
প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রতিযোগিতায় তিনি বরাবরই ঋষি সুনাকের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন। তাতে দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় সফল হলে নিজের মন্ত্রিসভায় দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে স্যার গ্যাভিনকে নিয়োগ দেন ঋষি।