দুই কোটি ২০ লাখ মানুষের দেশ শ্রীলঙ্কায় নারী অটোরিক্সা চালকের দেখা মেলা বিরল। তাদের অন্যতম লাসান্দা দীপ্তি (৪৩)। সংসারের হাল ধরতে তিনি এখন অটোরিক্সা চালক। কিন্তু ভাল নেই তিনি। কারণ, দেশে ভয়াবহ জ্বালানি সঙ্কট। মুদ্রাস্ফীতি ঘটেছে। আয় কমে গেছে মানুষের। জ্বালানি থেকে শুরু করে ওষুধ পর্যন্ত সবকিছুতে সঙ্কট। পেট্রোল নিতে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। কখনো কখনো তা ১২ ঘন্টা বা তারও বেশি।
দীপ্তি বলেন, মধ্য মে’তে তিনি পেট্রোল স্টেশনের লাইনে আড়াই দিন অপেক্ষায় ছিলেন। এক্ষেত্রে তাকে সাহায্য করেছিলেন এক ভাই। তার ভাষায়- এই দুর্ভোগের কথা বর্ণনা করার মতো শব্দ আমার জানা নেই। রাতের বেলা গাড়ি চালাতে অনেক সময় নিজেকে নিরাপদ মনে হয় না। কিন্তু উপায় তো নেই।
২০২১ সালের অক্টোবরের পর শ্রীলঙ্কায় পেট্রোলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ২৫৯ ভাগ। শ্রীলঙ্কায় বর্তমান এই সঙ্কটের মূলে আছে করোনা মহামারি। এ কারণে পর্যটন নির্ভর দেশটিতে কোনো পর্যটক যাননি। বিদেশে অবস্থানরত শ্রমিকদের রেমিটেন্স কমে যায়। এসব কারণে দেশটি অর্থনীতির এক গভীর সঙ্কটে নিমজ্জিত। তারই ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হারাতে হয় প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসেকে। নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় এসেছেন রণিল বীক্রমাসিংহে। তিনি গত সপ্তাহে নতুন অর্থমন্ত্রী নিয়োগ করেছেন। ছয় সপ্তাহের মধ্যে তারা একটি বাজেট দেয়ার পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু দীপ্তিদের জন্য কি সুবিধা থাকবে তা স্পষ্ট নয়। দীপ্তির পরিবারে আরেকটি অটোরিক্সা আছে। সেটা সাধারণত চালায় তার এক ভাই। সেটা মেরামত করার প্রয়োজন। কিন্তু এর খরচ বহনে অক্ষম তার পরিবার।
করোনা মহামারির আগে ঋণ নিয়ে এক খ- জমি কিনেছেন দীপ্তি। সেখানে কমপক্ষে এক লাখ রুপি ঋণ বাকি আছে। তা পরিশোধ করতে হবে তাকে। অন্যদিকে তিনি এখন নানী হয়েছেন। তিন মাস বয়সী নাতনী আছে তার। মেয়ের বসবাস তার আবাসস্থল থেকে ১৭০ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রউপকূলে মাতারা’য়। তাকে দেখতে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এমনিতেই নিজের সংসারে একমুঠো ভাত আর সবজি যোগার করতেই তাকে ঘাম ঝরাতে হচ্ছে।