English

23 C
Dhaka
রবিবার, নভেম্বর ১০, ২০২৪
- Advertisement -

শ্রীলঙ্কায় অর্থ সংকট চরমে, দেহব্যবসা বৃদ্ধি পেয়েছে ৩০ শতাংশ

- Advertisements -

চরম অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। বলা যায়, একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে দেশটির অর্থনীতি। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে দেশটির জনগণ। এর ফল হিসেবে নতুন এক সংকট দেখা দিয়েছে সেখানে। তাহলো বস্ত্রখাতে চাকরি হারিয়েছেন বিপুল পরিমাণ নারী। তারা জীবনজীবিকার তাগিদে যৌনকর্ম বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন। এরই মধ্যে দেশটিতে দেহব্যবসা বেড়েছে ৩০ শতাংশ।

শ্রীলঙ্কার গণমাধ্যম ‘ডেইলি মিরর এলকে’ একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটি অপ্রত্যাশিত সংকটে ভুগছে। দুই কোটি ২০ লাখ মানুষের এই দেশ বর্তমানে ভয়াবহ সংকটে। দারিদ্র্যেসীমার নিচে চলে যাচ্ছে বহু পরিবার। দেশটির বর্তমান অবস্থা অসংখ্য পরিবারকে শেষ প্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে। তারা সংসার চালাতে গিয়ে অসীম জটিলতার মুখোমুখি।

Advertisements

পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার এবং অত্যাবশ্যক চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে যুদ্ধ করছেন।
যৌনকর্মীদের অধিকার বিষয়ক গ্রুপ স্ট্যান্ড-আপ মুভমেন্ট লঙ্কা (এসইউএমএল)-এর তথ্যমতে, এই কঠিন পরিণতিতে সারাদেশে অস্থায়ী ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে নিষিদ্ধ পল্লী। কয়েক মাসে পতিতাবৃত্তি বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ৩০ ভাগ। কারণ, জীবিকা নির্বাহের তাগিদে অধিক থেকে অধিক নারী যৌনকর্মকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন। এসব নিষিদ্ধপল্লীর কিছু গড়ে উঠেছে স্পা এবং সুস্থ থাকার সেন্টার হিসেবে। অনেক নারী বলেছেন, তাদের পরিবারের মুখে তিন বেলা খাবার জোটাতে একটিই মাত্র উপায় আছে।

এসইউএমএল-এর নির্বাহী পরিচালক আশিলা ডানদিনিয়া বলেছেন, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বহু নারী শ্রমিককে বস্ত্রখাতের কাজ থেকে ছাঁটাই দেওয়া হয়েছে। তারা যৌনকর্ম বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন। বর্তমান সংকটের প্রেক্ষাপটে আমরা দেখতে পেয়েছি, অধিক হারে নারী যৌনকর্মী হিসেবে পেশা শুরু করেছেন। তাদের বেশির ভাগই এসেছেন বস্ত্র খাত থেকে। করোনা মহামারীর পরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বস্ত্রখাত। বহু নারী কাজ হারিয়েছেন। আর বর্তমান কঠিন অবস্থা তাদেরকে জীবিকা নির্বাহের জন্য ঠেলে দিয়েছে যৌনকর্মে।

২১ বছর বয়সী রেহানা (পরিবর্তিত নাম)। তিনি সংবাদ মাধ্যম এএনআইয়ের সঙ্গে তার কাহিনী শেয়ার করেছেন। জানিয়েছেন কেন তিনি বস্ত্রখাত থেকে যৌনকর্মী হয়ে উঠেছেন। সাত মাস আগে তিনি কাজ হারিয়েছেন। তারপর কয়েক মাস অসহায়ের মতো ঘুরেছেন। কোনও উপায় না পেয়ে শেষ পর্যন্ত পতিতাবৃত্তিতে নেমেছেন।

রেহানা বলেন, গত বছর ডিসেম্বরে আমি বস্ত্রখাত থেকে কাজ হারাই। তারপর দিনভিত্তিক আরেকটি কাজ পাই। তাও যখন কর্মী সংখ্যা কম হতো, তখনই আমাকে ডাকা হতো। তখনই আমি কাজ করার সুযোগ পেতাম। কিন্তু আমার নিয়মিত উপার্জন হয় এমন একটা কাজের দরকার, যা দিয়ে আমি আমার ও পরিবারের চাহিদার কিছুটা হলেও সামাল দিতে পারব। তারপর আমি একটি স্পা’র মালিকের কাছে গেলাম। সেখানে বর্তমান সংকটের প্রেক্ষিতে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিলাম। এই প্রস্তাব মেনে নিতে সায় দিচ্ছিল না আমার মন। কিন্তু পরিবারের জন্য টাকার খুব বেশি প্রয়োজন ছিল। তাই আমাকে এটাই বেছে নিতে হয়।

রেহানার মতো একই পেশা বেছে নিয়েছেন ৪২ বছর বয়সী রোজি (পরিবর্তিত নাম)। তিনি সাত বছর বয়সী একটি সন্তানের মা। বিচ্ছেদ হয়েছে তার বৈবাহিক সম্পর্কের। তার ওই সন্তানের শিক্ষা ও ঘরভাড়া মেটাতে অর্থ প্রয়োজন।

Advertisements

রোজি বলেন, সংকটের তুলনায় আয় পর্যাপ্ত নয়। পরিবার চালাতে যে অর্থের প্রয়োজন, তা যোগান দিতে পারছিলাম না। তাই আমাকে অন্য পথ বেছে নিতে হয়েছে। আমি একটি দোকান চালাই। তা সচল রাখতে চাই। এসব কারণে আমার অর্থের প্রয়োজন। তাই এখন দেহব্যবসাকে বেছে নিতে হয়েছে।

শ্রীলঙ্কায় নতুন করে এই যে নারীরা যৌনকর্মে লিপ্ত হচ্ছেন তারা মাসে ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার রুপি আয় করতেন বস্ত্রখাতে চাকরি করে। আর এখন দিনে দেহব্যবসা করে আয় করছেন ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার রুপি। কিন্তু এই আয় করতে গিয়ে তাদেরকে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
এসইউএমএলের নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, এসব যৌনকর্মী মা-বাবাকে নিয়ে একই বাসায় বসবাস করেন। আর্থিক সংকটে পার্টনার তাদেরকে ছেড়ে চলে গেছে। এরই মধ্যে তাদের অনেকে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছেন। এমন দুটি মেয়ের সন্ধান পেয়েছি আমরা। তাদের দেখাশোনা করছি। কারো কাছ থেকে, এমন কি সরকারের কাছ থেকেও এ বিষয়ে কোনও সাহায্য পাচ্ছি না।

এর আগে সংবাদ সংস্থা ‘এএনআই’ এর সঙ্গে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূটির কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুর রহিম সিদ্দিকী। তিনি বলেছেন, দেশে বর্তমানে খাদ্য অনিরাপত্তায় ভুগছে ৬৩ লাখ মানুষ। স্বাধীনতার পর দেশ সবচেয়ে কঠিন খাদ্য সংকটে ভুগছে। আগামী কয়েক মাসে মুদ্রাস্ফীতি আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, জুনে খাদ্যে মুল্যস্ফীতি শতকরা ৮০ ভাগের ওপরে। আগামী কয়েক মাসে এই ধারা অব্যাহত থাকবে।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন