জাপানের একটি ডায়াপার প্রস্তুতকারক কোম্পানি ঘোষণা করেছে, তারা দেশে শিশুদের জন্য ডায়াপার উৎপাদন বন্ধ করবে। এর পরিবর্তে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ডায়াপার তৈরি করবে।
গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জাপানে প্রতিবছর প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য তৈরি ডায়াপারের বিক্রি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি এ সময়ে শিশুদের জন্য তৈরি ডায়াপারের চেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য তৈরি ডায়াপার। ২০২৩ সালে জাপানে শিশুর জন্মহার হ্রাস পেয়েছে ৫.১ শতাংশ।
এ বছর দেশটিতে মোট ৭,৫৮,৬৩১ টি শিশু জন্মগ্রহণ করে। ১৯ শতকের পর এটিই জাপানে রেকর্ডে সর্বনিম্ন জন্মের সংখ্যা। ১৯৭০ সালে দেশটিতে শিশু জন্মের সংখ্যা ছিল ২০ লাখেরও বেশি।
শিশুদের ডায়াপার উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া কোম্পানি ওজি হোল্ডিংস বলছে, তারা এখন বছরে ৪০০ মিলিয়ন শিশু ডায়াপার তৈরি করে। ২০০১ সালে এই পরিমাণ ছিল ৭০০ মিলিয়ন। ২০০০ সালের পর থেকেই জাপানে শিশুদের ডায়াপার বিক্রি ক্রমবর্ধমানভাবে কমছে বলেও জানিয়েছে কোম্পানিটি।
২০১১ সালে জাপানের সবচেয়ে বড় ডায়াপার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইউনিচর্ম বলেছিল, তাদের প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য তৈরি ডায়াপারের বিক্রি শিশুদের ডায়াপারের চেয়েও বেশি।
জাপানে প্রাপ্তবয়স্কদের ডায়াপারের বাজার বাড়ছে এবং ধারণা করা হচ্ছে এর মূল্য ২ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ। জাপান এখন বিশ্বের অন্যতম বাধ্যক্যপূর্ণ জনসংখ্যার দেশ। দেশটির মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশের বয়স ৬৫ বছর বা তার বেশি। গত বছর ৮০ বছরের বেশি বয়সিদের অনুপাত প্রথমবারের মতো মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ অতিক্রম করেছে।
জাপানের জনসংখ্যা বৃদ্ধি না পেয়ে বরং প্রতিবছর তা কমছে। জনসংখ্যা হ্রাস বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম অর্থনীতি দেশটির জন্য একটি সংকটে পরিণত হয়েছে। আর এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে জাপানে নারীদের সন্তান ধারণের অনাগ্রহ থেকে। সন্তান ধারণে উৎসাহিত করতে নানা ধরনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে জাপান সরকার; কিন্তু এখন পর্যন্ত তা খুব সামান্যই সফলতার মুখ দেখেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিম্ন বিবাহের হার এবং কর্মক্ষেত্রে আরও বেশি নারী যোগদান থেকে শুরু করে সন্তান লালন-পালনের বর্ধিত খরচ এ সবই সন্তান গ্রহণে অনিচ্ছুক করে তুলছে জাপানি নারীদের। তবে জাপান একা নয়। হংকং, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান এবং দক্ষিণ কোরিয়াতেও শিশু জন্মের হার হ্রাস পাচ্ছে।