English

26 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪
- Advertisement -

রোদ্দুর রায়ের কথার প্যাঁচে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ!

- Advertisements -

জনপ্রিয় ব্লগার রোদ্দুর রায়। সামাজিক মাধ্যমে কটূক্তির মধ্য দিয়ে নিজের যুক্তি তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়-কেউই বাদ যায় না তার কটূক্তি থেকে।

‘চাঁদ উঠেছে গগনে’ গানটিকে বিকৃত করা, প্রকাশ্যে নেশা করার জন্য সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে রোদ্দুরকে। অনেকের কাছে তিনি ক্ষ্যাপা, আবার অনেকের কাছে প্রতিবাদী। কেউ তার ভক্ত, কেউ তার সমালোচক। সেই রোদ্দুর এখন কলকাতা পুলিশের হেফাজতে। যাকে আইনি ভাষায় বলা হয় পিসি বা পুলিশ কাস্টডি। কলকাতাবাসীর মধ্যে অনেকেই তাই মজার ছলে বলছেন- সব ঠিক ছিল, পিসিকে (মমতা) নিয়ে ভিডিও বানাতে গিয়েই রোদ্দুর এখন পিসিতে।

সম্প্রতি বলিউড গায়ক কেকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। কলকাতায় গাইতে এসে বলিউডে ফিরেছেন কফিনে করে। পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গান স্যালুটের মাধ্যমে বিদায় জানায় এই শিল্পীকে। এরপর তোলপাড় শুরু হয় ভারতে। একাংশর মতে কেকে আগেই অসুস্থ ছিলেন। অঘটনটা ঘটল কলকাতায়। অন্যদের মতে, সুস্থ থাকলেও সেদিন মঞ্চ বা অডিটোরিয়ামে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তাতে সুস্থ শিল্পীও ভয়ঙ্কর অসুস্থ হতে পারত। ফলে সেই পরিস্থিতির জন্য মমতার সরকার দায়ী।

সেই অন্যদের মতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভিডিও বানিয়েছিলেন রোদ্দুর। ভিডিওর বক্তব্যে বাদ যাননি কেউই। মুখ্যমন্ত্রী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মদন মিত্র, ফিরহাদ হাকিম, কবীর সুমন, ব্রাত্য বোস, রূপঙ্কর বাগচী এমনকী প্রধানমন্ত্রী মোদী- সবারই সমালোচনা করেছিলেন অশ্রাব্য গালিগালাজের মধ্য দিয়ে। ভিডিও পোস্ট হতেই মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। এরপরই শাসক দলের এক নেতা ঋজু দত্ত, নিজেকে তৃণমূলের মুখপাত্র হিসেবে পরিচয় দিয়ে চিৎপুর থানায় রোদ্দুরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। তিনি রোদ্দুরের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির দাবি জানান।

এরপরই গত ৭ জুন গোয়া থেকে রোদ্দুরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৯ জুন তাকে আদালতে তোলা হয়। সেদিন আদালতের বাইরে রোদ্দুরের সমর্থনে হাজির হয়েছিল বেশ কিছু সংগঠন ও তার অসংখ্য ভক্ত। বিশাল জমায়েত সামাল দিতে পুলিশকে আদালতে বাইরে ব্যারিকেড দিতে হয়েছিল। সেদিন ভিড় জানান দিচ্ছিল, আদালতের রায়ের পর চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে কলকাতায়।

এরপরই জানা যায়, মোক্সা তত্ত্বের প্রবক্তা রোদ্দুরের বিরুদ্ধে মানহানি, অশালীন বাক্য এবং বিদ্বেষমূলক মন্তব্য, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, ঘৃণা প্রদর্শনসহ একাধিক ধারায় মামলা দেওয়া হয়েছে। আপাতত ১৪ মে পর্যন্ত তাকে পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালতের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) ময়ূখ মুখোপাধ্যায়। এরপরই আদালত থেকে পুলিশ ভ্যানে ওঠার সময় তার নাম ধরে চিৎকার করতে শোনা যায় ভক্ত-সমর্থকদের। সেই ডাকে সাড়া দেন রোদ্দুরও।

ডান হাত পকেটে রেখে বাঁ হাত উপরে তুলে তাদের উদ্দেশ্যে রোদ্দুর শুধু বলেছিলেন- ‘রাজনীতি আর শিল্পী এক করে দেওয়া হচ্ছে’। এরপর তাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে একপ্রকার জোর করে ভ্যানে তুলে নেয় পুলিশ।

জানা গেছে, অনস্ক্রিনের রোদ্দুর পুলিশি হেফাজতে একেবারে শীতল। লকআপে একেবারেই নিস্তেজ হয়ে গেছেন। এমনটাই দাবি করেছেন লালবাজারের তদন্তকারী কর্মকর্তারা। লকআপে একেবারে নাকি লক্ষ্মী ছেলে তিনি। স্বাভাবিক ভাবেই খাওয়া-দাওয়া, ঘুম সবই সারছেন। তবে মাঝে মধ্যে কি সব বিড়বিড় করে আওড়াচ্ছেন। আর তা ঠাহর করতে কালঘাম ছুটেছে পুলিশের।

পুলিশ সূত্রে খবর, রোদ্দুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। তার ভিডিও তাকেই দেখানো হচ্ছে। জানতে চাওয়া হচ্ছে কেন এসব ভিডিও তিনি বানিয়েছেন, উত্তরে রোদ্দুর নাকি বারেবারে বলে উঠছেন ‘জয় মোক্সা জয়। ’ কী এই মোক্সা? তা কোনও ভাবেই বুঝতে পারছেন না পুলিশ কর্মকর্তারা। বাংলার পুলিশ এতদিন মার্কসবাদ শুনেছেন, মোক্সাবাদ এবারই প্রথম। তাই হয়ত বুঝে উঠতে হিমশিম খাচ্ছে!

কে এই রোদ্দুর রায়?

তার আসল নাম অনির্বাণ রায়। আছে অনেক গুণ। একাধারে তিনি কবি, লেখক, গায়ক, গবেষক আবার সামাজিক মাধ্যমে তার ব্লগ যথেষ্ট জনপ্রিয়। মুখে তার অশ্রাব্য ভাষার ফোয়ারা ছোটে। তার মানেই কি তিনি অশিক্ষিত? তার শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখে চমকে উঠেছেন সমালোচকরাও। তিনি একসময় দিল্লির নয়ডাতে আইটি সেক্টরে বড় পদে চাকরি করতেন। পরে চাকরি ছেড়ে আবার পড়াশোনায় ফিরে আসেন। শুরু করেন গবেষণা। গবেষণার বিষয়বস্তু চেতনা ও বিজ্ঞান। অবিরাম গান এবং কবিতার বিকৃতি ঘটানো নাকি তার গবেষণার একটা অংশ।

শুধু তাই নয়, মনোবিজ্ঞান নিয়েও প্রচুর পড়াশুনা করেছেন রোদ্দুর। নিজেকে নিয়ে বইও লিখেছেন তিনি। বইয়ের নাম ‘অ্যান্ড স্টেলা টার্নস এ মম’। ভারতের প্রবীণ নৃত্যশিল্পীদের মধ্যে একজন থাঙ্কুমুনি কুট্টি, তার লেখক হিসেবে কাজ করেছেন রোদ্দুর। একাধিক ডিগ্রির অধিকারী রোদ্দুর,  ফলে ভারতীয় শিক্ষার মাপকাঠিতে তিনি একজন উচ্চ শিক্ষিত ব্যাক্তি।

রোদ্দুর গবেষণার পাশাপাশি শাসক দল যখনই অন্যায় করেছে তখনই প্রতিবাদ করেছে। সাম্প্রতিককালে ঘটে চলা বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যু, পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃত্যু, ধর্মীয় অত্যাচার, নাগরিকত্ব আইন, এনআরসি থেকে শুরু করে বলিউড গায়ক কেকের মৃত্যু প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের ম্যানেজমেন্ট এবং সিস্টেমের বিরুদ্ধেও প্রশ্নের আঙুল তুলতে কখনও পিছপা হননি তিনি। কতটা শিক্ষিত হলে রাজনৈতিক নেতা হওয়া যায় সরাসরি সে কথাও প্রকাশ্যে বলতে ভয় পাননি তিনি।

তাই অনেকের কাছে তিনি ক্ষ্যাপা, অনেকের কাছে প্রতিবাদী। এসব করতে গিয়ে কখনও কখনও মাত্রাও ছাড়িয়ে ফেলেছেন। সে কারণে দ্বিতীয়বার হয়ত তাকে জেলের হাওয়া খেতে হবে। কিন্তু আপাতত জানা যাচ্ছে, তার কথার প্যাঁচে পুলিশ নাকি হিমশিম খাচ্ছে!

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন