রাশিয়ার সেনাবাহিনীর হয়ে ইউক্রেনে যুদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেল এবং ব্যক্তিগত মেসেজিং গ্রুপ ব্যবহার করে ভাড়াটে যোদ্ধা সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে বিবিসি এক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে।
ব্রিটিশ প্রচারমাধ্যম প্রতিষ্ঠান বিবিসি একজন বর্তমান ও একজন সাবেক ভাড়াটে যোদ্ধার সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের সঙ্গে রাশিয়ার অন্যতম প্রধান ভাড়াটে যোদ্ধা বাহিনীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এরা নিয়োগ প্রক্রিয়ার ব্যাপারে বিশদ তথ্য জানিয়েছেন বিবিসিকে।
যুদ্ধ শুরুর কয়েক সপ্তাহ আগে এখন চাকরিরত ভাড়াটে যোদ্ধাটি বিবিসিকে বলেছিলেন, ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার এর অনেক পুরনো যোদ্ধার সঙ্গে একটি গোপন টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগাযোগ করা হয়। তাদেরকে স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী খাবার শূকরের চর্বি দিয়ে তৈরি ‘সালো’র স্বাদ নিতে ইউক্রেনে ‘পিকনিকে’ যাওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়। দৃশ্যত এটা আসলে ছিল যুদ্ধে যোগ দেওয়ার সাঙ্কেতিক ভাষা।
‘যাদের অপরাধমূলক রেকর্ড ও ঋণ আছে, ভাড়াটে যোদ্ধা বাহিনী থেকে বহিষ্কৃত ও বহিঃপাসপোর্টহীন’ তাদের আবেদন করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল বার্তাটিতে। এতে আরও বলা হয়, ‘ রুশ-অধিকৃত লুহানস্ক এবং দোনেৎস্ক প্রজাতন্ত্র ও ক্রিমিয়া অঞ্চলের লোক হলে সাদরে আমন্ত্রিত।
ওয়াগনার গ্রুপ রাশিয়ার সবচেয়ে গোপন সংগঠনগুলোর একটি। এর আনুষ্ঠানিক অস্তিত্ব নেই। কারণ ভাড়াটে যোদ্ধা হিসেবে কাজ করা রুশ এবং আন্তর্জাতিক আইনের বিরুদ্ধে। কিন্তু ১০ হাজার পর্যন্ত যোদ্ধা গত সাত বছরে ওয়াগনারের সঙ্গে অন্তত একটি চুক্তি করেছে বলে মনে করা হয়।
বিবিসির সঙ্গে কথা বলা সেই ভাড়াটে সেনা বলেছেন, রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামরিক গোয়েন্দা ইউনিট জিআরইউ-এর কর্মকর্তাদের অধীনে বিভিন্ন ইউনিটে নতুন যোদ্ধাদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
ভাড়াটে সেনাটি জোর দিয়ে বলেন, নিয়োগের নীতি পরিবর্তিত হয়েছে। এখন কমই বিধিনিষেধ প্রয়োগ করা হচ্ছে। ‘তারা যে কাউকে নিয়োগ করছে’, বলেন তিনি। নতুন যোদ্ধাদের পেশাদারত্বের মান নিচু উল্লেখ করে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
ভাড়াটে সেনাটি জানিয়েছেন, নতুন ইউনিটগুলোকে আর ওয়াগনার হিসাবে উল্লেখ করা হয় না। বরং ‘দ্য হকস’ এর মতো নতুন নাম ব্যবহার করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির রুশ, ইউরেশীয় এবং পূর্ব ইউরোপীয় বিষয় অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ক্যান্ডেস রনডো বলেছেন, ‘ব্র্যান্ডটি কলঙ্কিত’ হয়ে পড়েছে বলে সম্ভবত সম্প্রতি এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
ওয়াগনার সিরিয়া এবং লিবিয়ায় তাদের অভিযানে বারবার মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছে।
বিবিসির সঙ্গে কথা বলা ভাড়াটে সূত্র জানায়, দক্ষিণ রাশিয়ার মোলকিনোয় রাশিয়ার একটি সেনা ঘাঁটির অদূরেই ওয়াগনারের ঘাঁটিতে নতুন নিয়োগ পাওয়াদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সুফ্যান সেন্টারের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো জেসন ব্লাজাকিস বলেছেন, ‘ভাড়াটে যোদ্ধাদের চাহিদা খুব বেশি। যুদ্ধক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পেতে ‘তাদের হাজারো ভাড়াটে সেনার প্রয়োজন হবে’।
সম্প্রতি রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু নিজেই বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্য থেকে ১৬ হাজার যোদ্ধা রুশ সেনাবাহিনীর হয়ে স্বেচ্ছায় লড়াই করতে এসেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মধ্যপ্রাচ্য থেকে যোদ্ধাদের যুদ্ধে মোতায়েন করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
ওয়াগনার গ্রুপ ২০১৪ সালে প্রথম চিহ্নিত হয়েছিল। তখন পূর্ব ইউক্রেনের সংঘাতে রাশিয়াপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন করছিল এ বাহিনী।