এটা এক পরীক্ষার কাহিনি। মিশরের উত্তরে বোরোলোস হ্রদে বিপন্ন পাখি এই এক্সপেরিমেন্টের বিষয়বস্তু। অন্যদিকে এক পাখি শিকারি উপার্জনের বিকল্প পথ পেলে সেই কাজ থামাতে চান। আর আছেন একজন পরিবেশবিদ, যার মাথায় নতুন এক আইডিয়া এসেছে। এক ভ্রমণ সংস্থাও সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে।
মিশরে এক উদ্যোগের আওতায় পাখি শিকারিরা এক হ্রদে বিপন্ন পাখিদের সঙ্গে বার্ডওয়াচারদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। মিশরের পর্যটকরা সেই পাখি দেখার জন্য অনেক অর্থ ব্যয় করছেন। সেই উদ্যোগ কতটা সার্থক? তারা সবাই একেবারে নতুন কিছু করার চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে সালাহ আবদেলআজিজ নামের শিকারির জন্য এটা একেবারে ভিন্ন কাজ।
সন্ধ্যা নামতেই তিনি পানিতে প্রবেশ করলেন। তিনি বোরোলোস হ্রদে নিজের জাল পরীক্ষা করলেন। তিনি নকল হাস ব্যবহার করে আসল পরিযায়ী পাখি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন। হ্রদের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় সেই পাখি যাতে নকল হাসগুলির সঙ্গে যোগ দেয়, সেটাই তিনি চান। হাসের শব্দ নকল করে তার ডাকের উদ্দেশ্যও এক। তবে সেই কৌশল মাঝেমধ্যে কাজ করে। বরং খাঁটি হাসের ডাকের রেকর্ডিং আরো নির্ভরযোগ্যভাবে অন্য হাসগুলিকে আকর্ষণ করে। এই পদ্ধতি বেআইনি বটে, কিন্তু রাষ্ট্র তার মতো শিকারীদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয় না। মিশরে কয়েক হাজার এমন শিকারী সক্রিয়।
পরের দিন সকালে সালাহ টের পেলেন, যে রাতে তিনি কোনো হাস ধরতে পারেন নি। তবে তিনটি নাইট হেরন পাখি ধরা পড়েছে। তিনি সাধারণ ক্রেতার কাছে ও রেস্তোরাঁয় সেগুলি বিক্রি করেন। পাখি শিকারি হিসেবে তার উপার্জনের কোনো বিকল্প পথ নেই। পাঁচ সদস্যের পরিবারের জন্য তাকে আয় করতেই হয়। কিন্তু সেই কাজ ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। কারণ তার পছন্দের প্রাণীর সংখ্যা কমে চলেছে। তিনি জানান, অতীতে একটি ঝাঁকে ২০০ হাস থাকতো। এখন বড়জোর ৫০টি দেখা যায়।
বোরোলস হ্রদের আয়তন প্রায় ৪৬০ বর্গ কিলোমিটার। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মাঝেই সেটি অবস্থিত। প্রথমবারের মতো বার্ডওয়াচার ট্যুর আয়োজন করা হচ্ছে। সেই হ্রদে একশোরও বেশি প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। এখন সেগুলি বিপন্ন হয়ে ওঠায় স্থানীয় মানুষ সেগুলির দেখা পাওয়ার মূল্য উপলব্ধি করছেন। এমনকি তার জন্য মাসুল দিতেও তারা প্রস্তুত।
যথেষ্ট সংখ্যক মানুষ এই ট্যুরে অংশ নেবেন কিনা, আয়োজকরা সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন না। তাছাড়া অনেক খুঁটিনাটী বিষয় স্থির করতে হয়। বারালাস ক্যাম্প পর্যটন সংস্থার আবদেল রহমান গালাল বলেন, ‘‘দূরবিন ছাড়া আমরা বার্ডওয়াচিং ভ্রমণ আয়োজন করতে পারি না, কারণ সেগুলি ছাড়া দূরের পাখি দেখা সম্ভব নয়।”
মিশরে দূরবিন পাওয়া মোটেই সহজ নয়। ‘নেচার কনজার্ভেশন ইজিপ্ট’ নামের পরিবেশ সংগঠন দূরবিন জোগান দেয়। স্থানীয় ভ্রমণ সংস্থাগুলির সঙ্গে বার্ডওয়াচিং ট্যুর চালু করা তাদেরই আইডিয়া ছিল। মিশরে বার্ডওয়াচিং গাইডের সংখ্যা খুবই কম। সালাহ আবদেলআজিজের মতো দক্ষ গাইড পাওয়া কঠিন। পরীক্ষামূলক ভ্রমণের দিনে তার উপার্জন ভালোই হয়েছে। তার ফলে শিকার না করে হারানো আয় পুষিয়ে গেছে।
তারপর জাদুময় পরিবেশ সৃষ্টি হলো। পাখিগুলি দলের খুব কাছে এসে মাছের জালের উপর বসলো। ইউরোপ থেকে এশিয়া যাবার পথে ব্ল্যাক ক্রাউন্ড নাইট হেরন ও স্কোয়াকো হেরনের দেখা পাওয়া গেল। সালাহ আবদেলআজিজের কাছো সেটা ছিল আবেগের এক মুহূর্ত। পাখি শিকারি হিসেবে এখন তিনি পাখি সম্পর্কে তার জ্ঞান বিতরন করতে পারছেন।