জীবনের গতিবিধি যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে একাকিত্বের সমস্যা। রাস্তা-ঘাট কিংবা মুঠোফোনে বন্দি সামাজিক মাধ্যমে বন্ধুর অভাব নেই, তবুও অনেকেই একাই। এই একাকিত্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানসিক সমস্যাও। যে কোনো ধরনের মানসিক সমস্যা কেবল মনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ওপরেই তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এর প্রভাব পড়ে মানুষের দৈনন্দিন জীবনেও। পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে নারীদের তুলনায় পুরুষেরা এ ধরনের সমস্যায় বেশি ভুগছেন।
ইংল্যান্ডের জাতীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা বলছে, ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ৬০ শতাংশই কোনো না কোনো ভাবে একাকিত্বের শিকার। আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক গবেষণা জানাচ্ছে, কোভিড চলাকালীন ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের মধ্যে কার্যত মহামারির রূপ নিয়েছে একাকিত্ব।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকেও কোভিড পরবর্তী সময়ে একাকিত্বকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। সম্প্রতি ‘যুব’ নামে এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভারতে একাকিত্বে ভুগছেন এমন তরুণীদের তুলনায় তরুণদের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, ভারতীয় যুবকদের একাকিত্বের মহামারি গ্রাস করছে, অথচ কেউই এ বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি সচেতন নন।
চারপাশে বহু মানুষের ভিড় থাকলেই আর একা লাগবে না, এমন ধারণা ঠিক নয় বলেও জানাচ্ছে বিভিন্ন সমীক্ষা। অধিকাংশ সময় তরুণ-তরুণীরা একাকিত্বের সমস্যা থেকে বাঁচতে সামাজিক মাধ্যমে বন্ধুর খোঁজ করেন। অথচ অজান্তেই সে সামাজিক মাধ্যমই তাদের আরও দূরে ঠেলে দেয় বাস্তব জগৎ থেকে।
কিন্তু এ থেকে মুক্তির উপায় কি? এ ধরনের সমস্যায় সবার আগে বুঝতে হবে নিজের মনকে। চিনতে হবে নিজের ভালো লাগা-ভালো থাকার ক্ষেত্রগুলোকে। মানসিক ভাবে বিচ্ছিন্ন বোধ করলে সাফল্যকেও তখন আর সফলতা বলে মনে হয় না। কাজেই সাফল্যে থেকেও দিনশেষে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনের শান্তি। অবহেলা করলে চলবে না মনের ছোট ছোট আপাততুচ্ছ ভালো লাগাও।
অনেক সময় এ ধরনের সমস্যা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারি না। মনের কথা শোনানোর জন্য আমাদের চাই এমন একজন মানুষ যিনি আমাদের মনের পরিস্থিতির কথা জেনেও কোনো বিরূপ মন্তব্য করবেন না। এক্ষেত্রে আপনার ভরসার সঙ্গী হতে পারেন একজন মনোবিদ। তিনিই আপনার মনের কথা শুনে আপনাকে সুস্থ জীবনে ফেরার পথ দেখাতে পারেন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।