ইউক্রেনের বন্দরনগরী মরিপোলে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আজ বৃহস্পতিবার মরিপোলের পতন হয়েছে জানিয়ে এই বন্দরকে ‘স্বাধীন’ ঘোষণা করেছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে দনবাসে রুশ হামলা জোরদারের পর এমন দাবি করলেন পুতিন।
এদিকে আজও ইউক্রেনের সেনারা মারিউপোলের একটি ইস্পাত কারখানায় অবরুদ্ধ ছিলেন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এসব কথা জানিয়েছে।
রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু পুতিনকে জানান, মরিপোল জয়ের অভিযানে ইউক্রেনের চার হাজারের বেশি সেনা নিহত হয়েছেন। প্রায় দেড় হাজার আত্মসর্মপণ করেছেন। আত্মসমর্পণ করা সেনাদের মধ্যে দুজন ব্রিটিশ সেনাও রয়েছেন।
আজভস্টাল আয়রন অ্যান্ড স্টিল ওয়ার্ক নামের চার বর্গমাইলের মরিপোলের ওই ইস্পাত কারখানায় ৫০০ আহত সেনা এবং কয়েক’শ বেসামরিক নারী-পুরুষ আশ্রয় নিয়ে আছেন বলে জানা গেছে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে সেখানে থাকা ইউক্রেনের সেনাদের দুই দফা আত্মসমর্পণের সময় বেঁধে দেওয়া হলেও তাঁরা লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
ক্রেমলিনে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে এক বৈঠকে মারিউপোলে অবরুদ্ধ ইউক্রেন সেনাদের বিষয়ে পুতিন বলেছেন, প্রায় দুই মাস অবরুদ্ধ থেকে বেঁচে থাকার পরও সেখানে থাকা সেনাদের সঙ্গে চূড়ান্ত লড়াইয়ের দরকার নেই। প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুকে পুতিন বলেন, ‘ওই কারখানায় প্রস্তাবিত চূড়ান্ত হামলা চালানো অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হচ্ছে আমার। আমি এই পরিকল্পনা বাতিলের নির্দেশ দিচ্ছি।’ এ সময় তিনি আজভস্টাল আয়রন অ্যান্ড স্টিল ওয়ার্ক নামের স্টিল কারখানাটি অবরুদ্ধ করে রাখার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘এলাকাটি পুরোপুরি অবরুদ্ধ করে দিন। যাতে একটি মাছিও সেখানে প্রবেশ করতে না পারে।’
ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে মারিউপোল দখলের দাবির বিষয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আজ বলেছেন, মরিপোলের বেশির ভাগই রুশ সেনাদের নিয়ন্ত্রণে। তবে সেখানকার একটি অংশে এখনো ইউক্রেনের সেনারা যুদ্ধ করছেন। তিনি জানান, মরিপোলে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার বেসামরিক নাগরিক অবরুদ্ধ হয়ে আছেন।
ভলোদিমির জেলেনস্কি আরও বলেন, রাশিয়াকে ‘সব বিকল্পের প্রস্তাব দিয়েছে’ ইউক্রেন। এমনকি আটক হওয়া রুশ সেনাদের মুক্তির বদলে আটকে পড়া মারিউপোলের নাগরিকদের উদ্ধারের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, তারা মস্কোর জবাবের অপেক্ষা করছেন। তবে গতকাল পর্যন্ত এ বিষয়ে রুশ বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মরিপোলে একসময় চার লাখ মানুষের বাসস্থান ছিল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি মানবিক বিপর্যয়ের শিকার হয়েছেন এখানকার বাসিন্দারা। প্রায় দুই মাস ধরে শহরটিতে রাশিয়ার অবরোধ এবং বোমাবর্ষণে কয়েক হাজার বেসামরিক নাগরিক বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে যেসব সাংবাদিকেরা মরিপোলে গিয়েছেন, তারা দেখেছেন সেখানকার রাস্তায় মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। প্রায় সব ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে এবং বাসিন্দারা ঠান্ডায় জমে রয়েছেন। ইউক্রেনের উপপ্রধানমন্ত্রী ইরিয়ানা ভারশচুক বলেন, ইস্পাত কারখানাটিতে আটকে থাকা এক হাজার বেসামরিক নাগরিক ও ৫০০ আহত সেনাকে দ্রুত সেখান থেকে বের করে আনা দরকার।