দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়ার একটি বিমানবন্দরে বসবাস করা হাসান আল কনতার নামের সিরীয় শরণার্থী কানাডার নাগরিকত্ব পেয়েছেন। বুধবার (১১ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানান কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বুধবার (১১ জানুয়ারি) দিনটি সিরীয় শরণার্থী হাসান আল কনতারের (৪১) জন্য একটি মাইলফলক। মালয়েশিয়ার বিমানবন্দরে সাত মাস আটকে থাকাসহ দীর্ঘদিন অনিশ্চিত জীবনযাপনের পর তিনি কানাডার নাগরিক হলেন।
নাগরিকত্বের শপথ নেওয়া অনুষ্ঠানের আগে কনতার আল জাজিরাকে বলেন, এত বছর পর এমন অর্জন আমার কাছে বিশাল বিজয়ের মতো। আমি এখন নিজের একটি দেশ পেয়েছি। শেষ পর্যন্ত মাথা গোঁজার ঠাই খোঁজার দীর্ঘ লড়াইয়ে মূল্য পেলাম।
‘এই নাগরিকত্ব পেতে আমি আমার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ হারিয়েছি। আমি আমার বাবার জন্য কিছু করতে পারিনি। এমনকি, তিনি মারা যাওয়ার সময়ও তার পাশে থাকতে পারিনি। নিজের ভাইয়ে বিয়ে দেখতে হয়েছে স্কাইপে।’
তিনি আরও বলেন, সমর্থন ও সহায়তা করার পরিবর্তে বিশ্বের বহু দেশ সিরিয়ান শরণার্থীদের আবদ্ধ করে ফেলছে। এমনকি, দেশগুলো অভিবাসন সংক্রান্ত বিধিনিষেধ বাড়িয়ে আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা একটি সীমার মধ্যে রাখার চেষ্টা করছে। এতে শরণার্থী সমস্যা বাড়ছে ও অধিকাংশ দেশ তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছে।
‘এমনকি, ডেনমার্কের মতো উন্নত দেশগুলো যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ান আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করেছে। অনেক আশ্রয়প্রার্থী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন। যাত্রাপথে অনেকেই মারা যান, আবার যারা নিরাপদে ইউরোপে পৌঁছান, তারা অনিশ্চিত জীবনের সামনাসামনি হন।’
আল কনতার বলেন, সিরিয়ানদের সামনে থেকে সব দরজা এক এক করে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এরপরও আমরা বেঁচে থাকতে সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
হাসান আল কনতার ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বগণমাধ্যমের নজরে আসেন। যুদ্ধগ্রস্ত সিরিয়া থেকে পালিয়ে আসার পর, আইনি অভিবাসনের কাগজপত্র ছাড়া মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকে পড়েন তিনি।
বৈধতা না থাকাটা সেসময় তার জন্য মালয়েশিয়া ছেড়ে অন্য কোথাও যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে দেওয়া তার পোস্টগুলো সারাবিশ্বে আলড়ন সৃষ্টি করে। অধিকাংশ মানুষ তার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেন।
২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদবিরোধী বিক্ষোভের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী ব্যবস্থার নেওয়ার পর সিরিয়ায় সংঘাতের সূচনা হয়। তারপর থেকেই দেশটিতে টানা গৃহযুদ্ধ চলছে।
জাতিসংঘ বলছে, গত এক দশকে সিরিয়ায় সাড়ে তিন লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন ও ১ কোটি ৩০ লাখেরও বেশি সিরিয়ান বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বাস্তুচ্যুতদের মধ্য থেকে ৬৬ লাখেরও বেশি দেশ ছেড়ে চলে গেছেন, যাদের অনেকেই বিভিন্ন দেশের শরণার্থী শিবিরে আটকে আছেন ও আইনি জটিলতায় ভুগছেন।