বর্তমানে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশ ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর সামরিক অভিযান শুরুর পর নতুন করে আলোচনায় আসেন তিনি।
এরই মধ্যে এই অভিযানে ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি শহর দখলে নিয়েছে রুশ বাহিনী। তবে সম্প্রতি রাজধানী কিয়েভ ও এর পাশ্ববর্তী এলাকা এবং চেরনিহিভ থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় রাশিয়া। তারা জানায়, রুশ বাহিনী অন্যান্য শহর ছেড়ে বরং ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ডোনবাস অঞ্চলের স্বাধীনতার ওপর বেশি জোর দেবে।
সেই ঘোষণা অনুযায়ী কিয়েভ ছেড়েছে রুশ সেনারা। কিয়েভের পাশ্ববর্তী শহর ‘বুচা’ ছেড়ে যাওয়ার পরপরই নতুন মোড় নেয় ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটের।
ইউক্রেনের অভিযোগ, বুচায় বেসামরিক নাগরিকদের নির্বিচারে হত্যা করে যুদ্ধাপরাধ করেছে রাশিয়া। অন্যদিকে রাশিয়ার দাবি, এসব ইউক্রেনের সাজানো নাটক।
বুচা শহরের এই যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি পশ্চিমা দেশগুলোসহ গোটা বিশ্বে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এর জেরে রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপী ইউনিয়ন (ইইউ)। এসব নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছেন পুতিনের দুই মেয়েও। এবার তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল জাপানও।
চিনে নিন পুতিনের দুই মেয়েকে
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বিয়ে করেছিলেন লুদমিলা আলেকসান্দ্রোভনা ওচেরেটনায়াকে। দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর এক ছাদের নিচে ছিলেন তারা। অবশেষে ২০১৪ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়। অনেক ধরেই গুঞ্জন চলছিল তাদের বিচ্ছেদের। যদিও পুতিন-লুদমিলা আলাদা হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন ২০১৩ সালের জুনে। ২০১৪ সালের এপ্রিলের শুরুতে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়া হয় তাদের বিচ্ছেদের বিষয়ে।
এই স্ত্রীর ঘরে পুতিনের রয়েছে দুই মেয়ে। তারা হলেন- মারিয়া ভরন্তসোভা ও ক্যাটেরিনা তিখোনোভা।
মারিয়া ভরন্তসোভা
পুতিনের বড় মেয়ের নাম মারিয়া ভরন্তসোভা। তার জন্ম ১৯৮৫ সালের ২৮ এপ্রিল, রাশিয়ার লেনিনগ্রাদে, যা বর্তমানে সেন্ট পিটার্সবার্গ নামে পরিচিত।
মারিয়া ভরন্তসোভা, মারিয়া ভ্লাদিমিরোভনা পুতিনা ও মারিয়া ফাসেন নামেও পরিচিত।
মারিয়া ভরন্তসোভা সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেট ইউনিভার্সিটিতে জীববিজ্ঞানও মেডিসিন নিয়ে পড়াশোনা করেন। এরপর ২০১১ সালে মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক হন। তিনি মস্কোর এন্ডোক্রিনোলজি রিসার্চ সেন্টার থেকে পিএইচডি অর্জন করেন।
তিনি পেডিয়াট্রিক গ্রোথ ডিসঅর্ডারে বিশেষজ্ঞ। এছাড়াও সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী তিনি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পুতিনের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন।
২০১৫ সালে তিনি ডাচ ব্যবসায়ী জরিট ফাসেনকে বিয়ে করেন। এখনও তারা মস্কোতে একসঙ্গেই বসবাস করছেন বলে জানা গেছে।
ক্যাটেরিনা তিখোনোভা
ক্যাটেরিনা তিখোনোভা হলেন পুতিনের দ্বিতীয় মেয়ে। তার জন্ম ১৯৮৬ সালের ৩১ আগস্ট। তিনি ইয়েকাতেরিনা ভ্লাদিমিরোভনা পুতিনা নামেও পরিচিত।
ক্যাটেরিনা তিখোনোভাও সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছেন। সেখানে তিনি এশিয়ান স্টাডিজ নিয়ে জাপানের ইতিহাস অধ্যয়ন করেছেন। এরপর তিনি জাপানে স্পেশালাইজেশন নিয়ে মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক হন। এছাড়াও তিনি পদার্থবিদ্যা এবং গণিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
২০২০ সালে ক্যাটেরিনা তিখোনোভাকে মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটির নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইনস্টিটিউটের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর আগে তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সিনিয়র পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং বিভিন্ন ধরনের পাবলিক-ফান্ডেড প্রকল্প পরিচালনা করছিলেন।
তিখোনোভা অ্যাক্রোবেটিক রক ‘অন’রোলের জগতেও সুপরিচিত, এটি হচ্ছে একটি অলিম্পিক খেলা, যা অংশগ্রহণকারী অ্যাথলেট বা গ্রুপগুলোকে অ্যাথলেটিক ও অ্যাক্রোবেটিক নৃত্যের রুটিন সম্পাদনে কাজ করে। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত অলিম্পিকের রাশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে এই ক্যাটাগরিতে তিনি ও তার সহযোগী ইভান ক্লিমভ দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিলেন।
তিখোনোভা ২০১৩ সালে কিরিল শামালভকে বিয়ে করেন, যিনি রসিয়া ব্যাংকের সহ-মালিক নিকোলে শামালভের ছেলে। তবে ২০১৮ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, তারা দু’জন আলাদা হয়ে গেছেন।