English

27 C
Dhaka
মঙ্গলবার, এপ্রিল ৮, ২০২৫
- Advertisement -

পানামা খাল দখল করতে গিয়ে যে বিপদে পড়তে পারেন ট্রাম্প

- Advertisements -

দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে গত ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রয়োজনে পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তিনি। পরের দিন মঙ্গলবার ট্রাম্পের হুমকির বিরুদ্ধে জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ জানিয়েছে পানামা।

ট্রাম্প যদি পানামা খাল দখল করতে শক্তি প্রয়োগ করে, বিশেষ করে সামরিক শক্তি ব্যবহার করে, তা হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক দশকের নীতিবিরুদ্ধ। এছাড়া ট্রাম্প নিজেও ব্যক্তিগতভাবে যুদ্ধবিরোধী। কারণ, তিনি দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সেনাদের যুদ্ধ করার বিরোধিতা করে আসছেন।

তাই হঠাৎ যদি তিনি পানামা খাল দখলের জন্য একটি বড় রকমের যুদ্ধ শুরু করেন, তা জনসমর্থন আদায় করতে ব্যর্থ হতে পারে।

সর্বপ্রথম পানামা খাল পানামা সরকারের কাছে হস্তান্তরের উদ্যোগ নেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার। পানামা খাল চুক্তি মার্কিন সিনেটে পাস হয় ১৯৭৮ সালে। এই চুক্তির পক্ষে তখন সিনেটের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সদস্যের ভোট পড়ে।

জিমি কার্টার মনে করতেন, পানামা খাল পানামা সরকারের কাছে ফেরত দেওয়া একটি ন্যায্য বিষয়। ওয়াশিংটন যেহেতু তখন পর্যন্ত মধ্য আমেরিকায় আধা ঔপনিবেশিক নীতি অনুসরণ করত, তাই জিমি কার্টারের পানামা খাল ফেরত দেওয়ার মধ্য দিয়ে ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন যুগের সূচনা হয় বলে ধারণা করা হয়।

জিমি কার্টার পানামা খালের সেই চুক্তি পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের দুই দলের প্রেসিডেন্টরাই মেনে চলেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন- রোনাল্ড রিগ্যান, জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ ও বিল ক্লিনটন। বিল ক্লিনটনের দ্বিতীয় মেয়াদের মাঝামাঝি ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পানামা খাল পরিচালনার দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে পানামা সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এর পর থেকে পানামা খালের পরিচালনা নিয়ে কোনও সমস্যা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রশাসনের তথ্যমতে, মার্কিন বন্দরগুলোয় যাতায়াত করা জাহাজগুলোর দুই-তৃতীয়াংশের বেশি পানামা খাল ব্যবহার করে।

গত ২০ জানুয়ারি অভিষেক ভাষণের আগেও গত ডিসেম্বরে পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ট্রাম্প একটি মন্তব্য করেন। তার জবাবে পানামার প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনো এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, “প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি জোর দিয়ে বলতে চাই, পানামা খাল ও এর আশপাশের অঞ্চলের প্রতি বর্গমিটার জায়গার বর্তমান মালিক পানামা এবং ভবিষ্যতেও তা পানামার থাকবে।”

গত মঙ্গলবার জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের কাছে লেখা চিঠিতে সংস্থাটির ঘোষণার একটি ধারার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, “ট্রাম্পের হুমকিতে আমরা উদ্বিগ্ন। জাতিসংঘের ঘোষণায় ‘অন্য দেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতা বা ভূখণ্ডের অখণ্ডতার বিরুদ্ধে শক্তি ব্যবহার বা হুমকি’ দেওয়া যাবে না বলে বলা হয়েছে।”

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের অভিযোগ- চীন পানামা খাল নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে, পানামা সরকার এ সুযোগ করে দিচ্ছে। কিন্তু পানামার প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনো ট্রাম্পের এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পাশাপাশি মঙ্গলবার এ খালে কার্যক্রম পরিচালনা করে— হংকংভিত্তিক এমন দুটি কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত করারও নির্দেশ দিয়েছে পানামা সরকার।

হুমকি অনুযায়ী পানামা খাল দখলে ট্রাম্প যদি সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে, তা গুরুতর যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। পানামা খালের এলাকার আয়তন প্রায় ৫০০ বর্গমাইল। আর পানামার জনসংখ্যা প্রায় ৪৫ লাখ। পানামা খাল যুক্তরাষ্ট্রের দখলে থাকুক—এটি দেশটির জনসংখ্যার বড় একটি অংশ কোনওভাবেই চাইবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর হিসাব অনুযায়ী, “কোনও সামরিক অভিযান সফল করার জন্য প্রতি এক হাজার বাসিন্দার বিরুদ্ধে ২০ জন যোদ্ধা দরকার হয়। সে হিসাবে পানামার বর্তমান জনসংখ্যা অনুসারে পানামা খাল দখলে নেওয়ার জন্য যুদ্ধ হলে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রায় ৯০ হাজার সেনা মোতায়েন করতে হবে। ট্রাম্প এত বড় পরিসরে কোনও যুদ্ধ শুরু করলে তাকে চরম সমালোচনার মুখে পড়তে হতে পারে।

অন্যদিকে পানামায় সামরিক অভিযানের জন্য মার্কিন কংগ্রেসে প্রস্তাব পাস করতে হবে। দলীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও এই ধরনের প্রস্তাব পাস করার জন্য পর্যাপ্ত সমর্থন পেতেও ট্রাম্পকে হিমশিম খেতে হবে। কারণ, উভয় দলের অনেক কংগ্রেস সদস্য সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে পানামা খাল দখলের বিরোধিতা করতে পারেন।

পানামা খালের দখল নিয়ে যুদ্ধ শুরু হলে সেটির ধাক্কা বিশ্ব অর্থনীতিতেও পড়বে। এই খাল দিয়ে প্রতিবছর বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রায় ৬ শতাংশ হয়ে থাকে। অথচ এরই মধ্যে লোহিত সাগরের সুয়েজ খাল দিয়ে চলাচলকারী জাহাজে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে বৈশ্বিক বাণিজ্যকে অস্থির করে তুলেছে ইয়েমেনের হুতিরা। এ খাল দিয়ে বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় ১২ শতাংশ বাণিজ্য হয়ে থাকে। সুতরাং বলা যায়, সামরিক শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমের পানামা খাল দখলে নেওয়া বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হবে।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন