পাকিস্তানের সঙ্গে সতর্ক সম্পর্কের বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। তারা বলেছে, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক থাকবে কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে। এক সময় পাকিস্তান ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র, বিশেষ করে আফগানিস্তানে যুদ্ধের সময় ও তার পরবর্তীতে। কিন্তু রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনে পাকিস্তানের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের চোখে। রাশিয়া যখন ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাচ্ছে তখন মস্কো সফরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সেখানে তিনি হাসি হাসি মুখে ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করছেন। এ ছাড়া জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাবে ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে পাকিস্তান।
একই কাজ করেছে বাংলাদেশ, ভারতও।
ফলে পাকিস্তানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক অবস্থানে চলে গিয়েছে। সে কথাই ফুটে উঠেছে হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি জেন পসাকির ব্রিফিংয়ে। শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেলে হোয়াইট হাউজে তিনি ব্রিফিং করছিলেন। সেখানে দুটি খোঁচা দেয়া প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন জেন পসাকি। এ দুটি প্রশ্নে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল পাকিস্তানের বর্তমান পলিসির সমালোচনা তিনি করবেন কিনা এবং ইসলামাবাদের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতের কোনো আগ্রহ যুক্তরাষ্ট্রের আছে কিনা।
পাকিস্তানি একজন সাংবাদিক তাকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, অনেক মাস আগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। ওই সাংবাদিকের ভাষায়- এ বিষয়ে আমরা আর কিছু শুনতে পাইনি। পাকিস্তানি নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ না করার জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ আছে কি?
জবাবে জেন পসাকি বলেন, ফোনকল বা যোগাযোগের পরিকল্পনার বিষয়ে আমার কাছে কোনো আপডেট নেই। স্পষ্টতই, পাকিস্তানের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করি। পররাষ্ট্র মনত্রণালয়ের মাধ্যমে, আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা টিটমের মাধ্যমে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। কিন্তু প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কোনো ফোনকল বা যোগাযোগের বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।
এরপর ওই সাংবাদিক স্মরণ করিয়ে দেন যে, প্রধানমন্ত্র ইমরান খান সম্প্রতি এক জনসমাবেশে বলেছেন, পাকিস্তানের অন্য রাজনীতিকদের মতো তিনি আমেরিকার দাস হবেন না। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি? জবাবে জেন পসাকি বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। এই সম্পর্ক আমরা কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে অব্যাহত রাখবো। এর বাইরে এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। ওদিকে গত মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, এখনও পাকিস্তানকে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে যুক্তরাষ্ট্র।
ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য বেইজিংয়ের সঙ্গে ইসলামাবাদের সম্পর্কে টান ধরানোর প্রয়োজন নেই।
উল্লেখ্য, শীতল যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল পাকিস্তান। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। আফগানিস্তানে সোভিয়োত বিরোধী যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল পাকিস্তান। এ ছাড়া সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধে পাকিস্তান ছিল অন্যতম অংশীদার। কিন্তু সেই সম্পর্ক তিক্ত হওয়া শুরু করে আল কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে কেন্দ্র করে। কারণ, তাকে শনাক্ত করা হয়েছিল পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে।
এ বিষয়টি ইসলামাবাদকে অবহিত না করেই তার আস্তায় অভিযান চালান যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
২০১৯ সালের জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সরকারি কাজে ওয়াশিংটন সফরে যান। সেখানে হোয়াইট হাউজে সাক্ষাত করেন তখনকার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে। একই বছর সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে নিউ ইয়র্কে ট্রাম্পের সঙ্গে তিনি আবারও মিটিং করেন। তারপর থেকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ইমরান খানের মুখোমুখি কোনো বৈঠক হয়নি। এমনকি ইমরান খানকে বাইডেন সৌজন্য ফোনও করেননি।