কুকুরের মাংস খাওয়া কোরিয়ান উপদ্বীপে শতবর্ষী পুরনো একটি চর্চা এবং গ্রীষ্মকালে এটা শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে বলে তাদের বিশ্বাস। দক্ষিণ কোরিয়ায় এখন পর্যন্ত এটি স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ নয়, আবার সম্পূর্ণ বৈধও নয়।
কিম জং-কিল নামের একজন ব্যবসায়ী জানান, গত ২৭ বছর ধরে কুকুরের মাংসের খামার পরিচালনা করে আসছে তার পরিবার এবং এ নিয়ে তিনি খুবই গর্বিত। আগামী দিনে নিজের সন্তানদের হাতে এই ব্যবসা তুলে দেওয়ার কথা ভাবছেন তিনি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় কুকুরের মাংসের ব্যবসা নিষিদ্ধ করতে রাজনীতিবিদ এবং অধিকারকর্মীদের জোর প্রচেষ্টার ফলে এই শিল্পের ভবিষ্যত এখন অনিশ্চয়তার মুখে।
সিউলের দক্ষিণে পিয়ংতেক শহরে নিজের খামারে দাঁড়িয়ে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে ৫৭ বছর বয়সী কিম বলেন, “আমার অনুভূতিটা আসলে খারাপ লাগার চাইতেও বেশি কিছু। আমি এই উদ্যোগের সরাসরি বিরোধিতা করছি এবং এটা প্রতিরোধের জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।”
দক্ষিণ কোরিয়ার ফার্স্ট লেডি কুকুরের মাংস নিষিদ্ধের প্রতি তার সমর্থন জানানো এবং দুজন আইনপ্রণেতা এই ব্যবসা নিষিদ্ধের জন্য বিল উত্থাপন করার পর দেশটিতে কুকুরের মাংস-বিরোধী ক্যাম্পেইন জোরাল হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার কুকুরের মাংস বেচাকেনার শিল্প এর আগেও আন্তর্জাতিক মহলের নজরে এসেছে, যেহেতু সম্পদশালী এবং অতি-আধুনিক গণতন্ত্রের দেশ হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ার খ্যাতি রয়েছে। তাছাড়া, দক্ষিণ কোরিয়াই একমাত্র দেশ যেখানে ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেলে খামারগুলোতে উৎপাদন হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার বেশিরভাগ খামারেই পাঁচশোর বেশি কুকুর রয়েছে বলে জানিয়েছে এই খামারিদের একটি সংঘ।
যদিও সিউলের কেন্দ্রস্থলে কুকুরের মাংসের রেস্টুরেন্ট খুঁজে পাওয়া কঠিন, কিন্তু গ্রামাঞ্চলে এখনও এ ধরনের অনেক রেস্টুরেন্ট আছে।
৭৭ বছর বয়সী ইয়ুন চু-ওল বলেন, “আমি আগে যা আয় করতাম, এখন তার তিনভাগের একভাগ আয় করি। তরুণরা এখন আর রেস্টুরেন্টে আসে না। শুধুমাত্র বৃদ্ধরা দুপুরের খাবার খেতে আসে।” সিউলের কিয়ুংডং মার্কেটে তার রেস্টুরেন্টে কুকুরের মাংস পাওয়া যায়। “আমি বয়স্ক ক্রেতাদের বলি যে, নিষিদ্ধ হওয়ার আগেই যেন ঘন ঘন আমার রেস্টুরেন্টে এসে খায়”, বলেন ইয়ুন।
ডগ ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সন ওক হাক বলেন, কুকুরের মাংসের দাম এবং চাহিদাও কমে যাওয়ায় সম্প্রতি কয়েক বছরে বহু খামারির ব্যবসা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। তিনি মনে করেন, অধিকারকর্মীদের ক্যাম্পেইন এবং অপেক্ষাকৃত খারাপ খামারগুলোকে কেন্দ্র করে গণমাধ্যমের অসাধু প্রতিবেদনের কারণে এমনটা হয়েছে। তবে কেউ কেউ জানিয়েছেন, তরুণরা কুকুরের মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকায় এটির চাহিদা এমনিতেও কমে আসছিল।
ডগ ফার্মারস’ অ্যাসোসিয়েশন জানায়, কয়েক বছর আগের তুলনায় বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ায় কুকুরের মাংসের খামারের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। বর্তমানে দেশটিতে ৩০০০ থেকে ৪০০০ খামার রয়েছে এবং প্রতিবছর ৭০০,০০০ থেকে ১ মিলিয়ন কুকুর মাংসের জন্য হত্যা করা হয়। যদিও ১০-২০ বছর আগে বছরে কুকুর হত্যা করা হতো কয়েক মিলিয়ন। তবে অধিকারকর্মীদের কেউ কেউ বলছেন, খামারিরা সংখ্যা বাড়িয়ে বলছেন এটা বোঝাতে যে তাদের শিল্প কত বড় এবং এটা ধ্বংস করা কঠিন।
গত এপ্রিলে ফার্স্ট লেডি কিম কেও হি অধিকারকর্মীদের সাথে একটি সভায় বলেন, তিনি আশা করছেন যে দক্ষিণ কোরিয়ায় কুকুরের মাংস খাওয়া বন্ধ হবে। কিন্তু এর প্রতিবাদে মিছিল করে দেশটির কৃষক-খামারিরা এবং তাদের জীবিকায় আঘাত করার অভিযোগে কিমের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র জমা দেয়।
আইনপ্রণেতা হান বলেন, তার প্রস্তাবিত বিলে যেসব কৃষকরা খামার বন্ধ করে দিতে সম্মত হবেন, তাদেরকে সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় আনার কথা উল্লেখ রয়েছে। খামার উঠিয়ে নেওয়ার জন্যও তাদেরকে টাকা দেওয়া হবে; বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থান সহায়তা এবং অন্যান্য সুবিধাও দেওয়া হবে।