তুরস্কের অর্থনৈতিক সংকট ক্রমেই গভীর হচ্ছে। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে লাখ লাখ শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে দেশটিতে। এমন পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তুরস্কের বিভিন্ন জায়গায় বিদেশি নাগরিকরা ঘোরাঘুরি করছে সম্প্রতি এমন বেশ কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা হচ্ছে, বিশেষ করে টুইটারে। তুরস্কের নাগরিকরা উদ্বেগ জানিয়ে শরণার্থীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন।
দেশটির নাগরিকরা অভিযোগ করে বলেন, সিরিয়ার শরণার্থীরা তাদের চাকরিতে ভাগ বসিয়েছেন। তাছাড়া এ কারণে বাড়ি ভাড়াও বেড়েছে। বেড়েছে মূল্যস্ফীতি, কমেছে ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রা লিরার দর। জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ তার্কিশরা শরণার্থীদের ফেরত পাঠাতে চায়।
বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, নাগরিকদের এমন ক্ষোভকে কাজে লাগাচ্ছে দেশটির রাজনীতিবিদরা। কারণ ২০২৩ সালের জুনে তুরস্কের সংসদীয় ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সম্প্রতি তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানায়, ৪০ লাখের বেশি শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ৩৮ লাখ সিরিয়ার নাগরিক। তাছাড়া হাজার হাজার আফগান শরণার্থীকেও আশ্রয় দিয়েছে তুর্কি প্রশাসন।
এর আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যেপ এরদোয়ান বলেন, শরণার্থীরা নিজেদের ইচ্ছায় দেশে ফিরে যেতে পারেন। তবে আমরা এ বিষয়ে জোর করবো না। গত সপ্তাহে তিনি বলেন, ১০ লাখ সিরীয় নাগরিককে স্বেচ্ছায় ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি।
তুরস্কের ইকোনমিক পলিসি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের বিশ্লেষক সেলিম কোরু বলেন, শরণার্থীদের জন্য শিক্ষা থেকে নিরাপত্তা সব কিছুতেই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারের নীতির কারণে আমরা গরীব। শরণার্থীদের অবাধ প্রবাহের কারণেই আমাদের করুণ দশা।
গ্রিনিচ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির সিনিয়র লেকচারার সেম ওইভাট বলেন, শরণার্থীদের ফেরত পাঠালেই অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হবে। মূল্যস্ফীতি ৭০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হওয়ায় শরণার্থীদের ওপর ক্ষোভ বাড়ছে।
এপ্রিলে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ। ফলে দেশটির সাধারণ মানুষের মধ্যে অস্বস্তি বাড়ছে। এতে চাপ বাড়ছে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যেপ এরদোয়ানের ওপর। তার অর্থনৈতিক নীতির কারণেই এমন সংকট তৈরি হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তুরস্কের জাতীয় পরিসংখ্যান বিভাগ জানিয়েছে, চলতি বছরের এপ্রিলে ভোক্তা মূল্যসূচক বেড়েছে ৬৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ। মার্চে এই হার ছিল ৬১ দশমিক ১৪ শতাংশ।