আগামী ৮ জানুয়ারি থেকে চীনে ভ্রমণকারীদের জন্য কোয়ারেন্টিন বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা।
দেশটিতে জিরো-কোভিড নীতি থেকে সরে আসার পর সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এটি। তিন বছর সীমান্ত বন্ধ থাকার পর এই দেশটি আবার তাদের জন্য উন্মুক্ত করা হচ্ছে যাদের কাজ করার ও শিক্ষা ভিসা রয়েছে। এছাড়া পরিবার পরিজনদের সাথে দেখা করার জন্যও দেশটিতে যাওয়া যাবে।
তবে এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এলো যখন চীন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কারণে করোনাভাইরাসের ভয়াবহ বিস্তার মোকাবেলায় লড়াই করে যাচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, হাসপাতালগুলোতে জায়গা নেই এবং বয়স্ক মানুষ মারা যাচ্ছে।
দৈনিক আক্রান্ত এবং মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা এখন আর জানা সম্ভব নয় কারণ কর্মকর্তারা কোভিড সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ করা বন্ধ করে দিয়েছে।
বেইজিং গত শুক্রবার জানায় যে, প্রায় চার হাজার মানুষ নতুন করে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছে এবং গত সপ্তাহে টানা চার দিন কোনও মৃত্যু হয়নি। রবিবার দেশটি বলেছে যে তারা দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা প্রকাশ করা বন্ধ করবে।
তবে একটি ব্রিটিশ স্বাস্থ্য তথ্য সংস্থা এয়ারফিনিটি অনুমান করেছে যে, চীনে দৈনিক ১০ লাখ মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে এবং পাঁচ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে।
চীন বিশ্বের সর্বশেষ প্রধান উন্নত অর্থনীতির দেশ, যারা তিন বছরের লকডাউন, সীমান্ত বন্ধ এবং কোভিডের সংস্পর্শের কারণে কোয়ারেন্টিন চালু রাখার পর “কোভিডের সাথে বসবাস” করার ঘোষণা দিলো।
তথাকথিত জিরো-কোভিড নীতি অর্থনীতিকে ব্যাহত করেছে। নানা বিধিনিষেধ মান্য করার বিধান এবং বারবার পরীক্ষা করানোর বাধ্যবাধকতা নাগরিকদের বিড়ম্বনায় ফেলেছে। এই নীতির বিরুদ্ধে অসন্তোষ গত নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের বিরুদ্ধে বিরল জন বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। যার ফলে কর্তৃপক্ষ কয়েক সপ্তাহ পরেই কোভিডের নিয়মকানুন বাদ দিয়েছে।
সীমানা বন্ধ করে রাখাটা ছিল সবশেষ প্রধান নিষেধাজ্ঞা। ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে, যে কেউ চীনে প্রবেশ করলে তাকে একটি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় তিন সপ্তাহের জন্য বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হতো। যা সম্প্রতি পাঁচ দিনে কমিয়ে আনা হয়েছে।
কিন্তু সোমবার জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন ঘোষণা করেছে যে, আগামী ৮ জানুয়ারি কোভিডকে আনুষ্ঠানিকভাবে বি-শ্রেণীর সংক্রামক রোগে নামিয়ে আনা হবে। এর অর্থ হল কোয়ারেন্টিন বাদ দেওয়া হবে। তবে এখনো চীনে আগত যাত্রীদের একটি পিসিআর টেস্ট করাতে হবে। সেই সাথে প্রতিদিন চীনে অনুমোদিত ফ্লাইটের সংখ্যাও কমিয়ে আনা হবে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, তারা কাজ এবং শিক্ষার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করা এবং পুনর্মিলনের জন্য চীনে আসতে ইচ্ছুক বিদেশীদের জন্য ভিসার ব্যবস্থাও “সর্বোচ্চ বিবেচনা” করবে।
এটি পর্যটক ভিসার ক্ষেত্রেও করা হবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। তবে কর্মকর্তারা বলেছেন যে, আন্তর্জাতিক প্রমোদ তরীর ক্ষেত্রে একটি পাইলট প্রোগ্রাম চালু করা হবে।
নতুন এই বিধিনিষেধকে অনেক চীনা নাগরিক স্বাগত জানিয়েছে। কারণ তারা এখন আবার বিদেশ ভ্রমণ করতে পারবে। স্থানীয় ফ্লাইট বুকিং ওয়েবসাইটগুলো বলছে যে, এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফ্লাইট বুকিং আকাশচুম্বী হয়েছে।
তবে অনেকেই চীনে কোভিডে আক্রান্তের সংখ্যা শীর্ষে থাকা সত্ত্বেও সীমান্ত পুনরায় খোলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বেইজিং এবং সাংহাইয়ের মতো শহরের লোকেরা বলছেন যে, তাদের ফ্লু এবং সর্দির ওষুধ শেষ হয়ে যাচ্ছে এবং মানুষ তাদের অসুস্থ আত্মীয়দের জন্য চিকিৎসা সেবা যোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে।
স্থানীয় ক্রিমেটোরিয়াম যেখানে মৃতদের শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয় সেখানে কার্যক্রম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, শত শত মৃত্যু হিসেবের বাইরে থেকে যাচ্ছে।
সোমবার প্রেসিডেন্ট শি এসব পরিবর্তনের বিষয়ে প্রথম মন্তব্য করেন, কর্মকর্তাদেরকে জীবন বাঁচানোর জন্য “সম্ভাব্য” সব কিছু করার আহ্বান জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায় তাকে উদ্ধৃত করে বলা হয় যে, দেশটি মহামারি নিয়ন্ত্রণের সাথে একটি নতুন পরিস্থিতির মুখে পড়েছে এবং আরও লক্ষ্যভিত্তিক কাজ করতে হবে।
মহামারি ব্যবস্থাপনা নিয়ে চীনের পদক্ষেপ মি. শিকে একটি কঠিন অবস্থানে ফেলেছে। চীনের জিরো-কোভিড নীতির পেছনে তার হাত ছিলো এবং অনেকে মনে করেন যে, এটি মানুষের জীবনকে অত্যধিক সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে এবং এটি অর্থনীতিকে পঙ্গু করার জন্য দায়ী।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন যে, এই নীতি থেকে সরে আসার কারণে তাকে এখন সংক্রমণের বিশাল ঢেউ এবং হাসপাতালে ভর্তির দায়িত্ব নিতে হবে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন যে, একবার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পরে কেন দেশটি একটি ঢেউ মোকাবেলার জন্য আরও ভালভাবে প্রস্তুত ছিল না।