কানাডা থেকে বেআইনি পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের হার ২০০১ সালের তুলনায় গত বছর ৭৪৩% বেড়েছে। নিউইয়র্ক, ভারমন্ট এবং নিউ হ্যামশায়ার স্টেট সংলগ্ন সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রধান রবার্ট গার্সিয়া এ তথ্য জানিয়েছেন।
গত ১৯ জানুয়ারি নর্থ ডেকটা সীমানার ৪০ ফুটের মধ্যে বরফে আচ্ছাদিত একটি গাড়ির ভেতর থেকে শিশু, তরুণসহ ৪ ব্যক্তির লাশ উদ্ধারের পর সীমান্ত রক্ষীরা কানাডা থেকে এ এলাকা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়ার সময় গ্রেফতারের এ তথ্য প্রকাশ করলো।
সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, দুর্গম পথে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়ার সময় গ্রেফতারকৃতরা ১৯ দেশের নাগরিক রয়েছে। এরমধ্যে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ সেন্ট্রাল আমেরিকার দেশ রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের শেষ ৩ মাসে মেক্সিকো সীমান্ত অতিক্রম করে টেক্সাস-আরিজোনা-ক্যালিফোর্নিয়ায় বেআইনিভাবে ঢুকে পড়ার সময় ৭ লাখ বিদেশিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ইউএস বর্ডার পেট্রল এবং কাস্টমস’র এজেন্টরা জানায়, গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ মাসে কানাডা থেকে নিউইয়র্কে ঢুকে পড়ার সময় ৪৪১ বিদেশীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা হিমাঙ্কের নীচের তাপমাত্রার মধ্যে সীমান্ত রক্ষীদের দৃষ্টি এড়িয়ে কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রওয়ানা দিয়েছিলেন। এ সময় মারা গেছে ১৪ জন। দুর্গম পথে সীমান্ত অতিক্রমের সময় কতজনের প্রাণ ঝরে তার সঠিক সংখ্যা কখনোই জানা সম্ভব হয় না। এই ১৪টি লাশ উদ্ধার করায় তা জানানো হয়েছে। কানাডা থেকে গাড়িতে ভরে বেআইনি পথে যুক্তরাষ্ট্রে আদম আমদানির সাথে জড়িত এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি ফ্লোরিডায় থাকতেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ থেকে কানাডায় অবতরণের পর এই ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা দিতেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। গত জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৫ মাসে অবৈধভাবে সীমানা অতিক্রমে বাধা দেয়ায় সীমান্ত রক্ষীদের সাথে সংঘাতে লিপ্ত হন অন্তত ৯ জন বিদেশি। এদেরকে আহত অবস্থায় গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগের ২৭ মাসে এ ধরনের মারদাঙ্গা পরিস্থিতি একটিও ছিল না। এরমধ্যে একজন হচ্ছেন মেক্সিকান। তাকে গত সপ্তাহে আদালতে সোপর্দ করা হলে এক বছরের কারাদন্ড এবং এক লাখ ডলারের জরিমানা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত। দন্ড ভোগের পর তাকে মেক্সিকোতে পাঠিয়ে দেয়া হবে।
কানাডা বর্ডার পেট্রোল এজেন্টরা আরো জানান, ২০২১ এবং ২০২২ সালে কানাডা থেকে বিদেশিদের যুক্তরাষ্ট্রে বেআইনিভাবে ঢুকে পড়ার প্রবণতা চরমে উঠেছে। প্রতিদিনই বিপুলসংখ্যক বিদেশী ধরা পড়ছে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়ার পরই। তারা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করলেও খুব কম সংখ্যকেরই আবেদন মঞ্জুর করা হচ্ছে। কানাডা বর্ডার পেট্রোল কর্মকর্তারা সর্বসাধারণের উদ্দেশ্যে উল্লেখ করেছেন যে, কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তের পুরোটাই বরফে আচ্ছাদিত। অসহনীয় ঠান্ডা। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেউ যাতে দুর্গমপথে কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়ার চেষ্টা না করেন। বিশেষ করে শিশু-কিশোরসহ কেউ যেন পায়ে হেঁটে সীমান্ত অতিক্রমের কোনো উদ্যোগ না নেন। বর্ডার পেট্রোল এজেন্টরা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন যে, এক শ্রেণীর আদম পাচারকারি অর্থের লোভে মানুষকে মহাবিপদের পথে ঠেলে দিচ্ছে।