কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে ইসরাইলের কাছে ট্যাংকের গোলা বিক্রি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। পাশাপাশি, ইসরাইল যুদ্ধাপরাধ করছে কিনা তার ক্রমাগত মূল্যায়নও তারা করছে না বলে জানা গেছে। এসব ঘটনায় তদন্তের মুখে পড়তে পারে বাইডেন প্রশাসন।
কিছু দিন আগেও মানবিকতার খাতিরে ইসরাইলের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা উচিত বলে মন্তব্য করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। অথচ তার পরে জাতিসংঘে আনা হামাস বনাম ইসরাইলের যুদ্ধে সংঘর্ষবিরতির একটি প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে তারা। এ বার জানা গেল, জরুরি ভিত্তিতে বিশেষ অধিকার প্রয়োগ করে ইসরাইলকে প্রায় ১৪ হাজার ট্যাঙ্কের গোলা সরবরাহ করেছে জো বাইডেনের সরকার।
কংগ্রেসকে এড়িয়ে দ্রুততম সময়ে ইসরাইলের কাছে ১৩ হাজার ট্যাংকের গোলা বিক্রিতে ‘আর্মস এক্সপোর্ট কন্ট্রোল অ্যাক্টের’ জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শনিবার এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন এ কথা জানিয়েছে। ইসরাইলের কাছে সম্ভাব্য অস্ত্র বিক্রির বিষয়টি কংগ্রেসের পর্যালোচনা এড়াতে জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগের এ বিরল পথে হাঁটেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। শুক্রবার রাতে কংগ্রেসে জরুরি এ ঘোষণা পাঠানো হয়। এসব গোলার মূল্য ১০ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
এভাবে কোনো দেশে অস্ত্র বিক্রির ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে সচরাচর ঘটে না। সাধারণত কংগ্রেসের সংশ্লিষ্ট কমিটি এ ধরনের অনুরোধ পেলে ২০ দিন সময়ের মধ্যে পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকে। কমিটি প্রস্তাবটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখে, কোনো কিছু জানার থাকলে তথ্য চেয়ে নেয়। কখনো কখনো কংগ্রেস কমিটি প্রস্তাবের সমালোচনা করে থাকে কিংবা অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন না-ও দিতে পারে। তবে জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগের ফলে এখন আর এসবের কিছুই হচ্ছে না।
এই ঘটনায় বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার রক্ষাকারী সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এত দিন এই যুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্য যে ভাবে কথা বলে এসেছে, তাদের সাম্প্রতিকতম পদক্ষেপ কিন্তু তার সঙ্গে মিলছে না। আমেরিকান কংগ্রেসের বিবেচনা ও অনুমোদনের অপেক্ষা না করেই ওই গোলা-গুলি সরবরাহ করেছে আমেরিকা।
পেন্টাগন সূত্রে খবর, ইসরাইলকে অস্ত্র বিক্রির একটি বৃহত্তর চুক্তির অংশ হিসেবে এই বরাত পাঠানো হয়েছে। সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহত্তর চুক্তি অনুযায়ী ইসরাইলকে ৪৫ হাজার ট্যাঙ্কের গোলা সরবরাহ করার কথা ছিল আমেরিকার। যার মূল্য ৫০ কোটি ডলার। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতি আমেরিকায় তৈরি অস্ত্র কোথায় এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে সে বিষয়ে আমেরিকান কংগ্রেসের নজরদারি আরও কড়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সেই অনুমোদন মেলার আগেই বিশেষ আইন প্রয়োগ করে গোলাগুলি পাঠাল আমেরিকা।
অন্য দিকে, জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে আমেরিকা ভেটো দেয়ার পর পরই গাজায় হামলা আরও বাড়াল ইসরাইল। দক্ষিণ গাজার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর খান ইউনিসে হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে ইসরাইল। যুদ্ধে এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৮ হাজার ফিলিস্তিনি মারা গিয়েছেন। আহত প্রায় ৫০ হাজার। নিহতদের মধ্যে ৪০ শতাংশের বয়সই ১৮ বছরের কম।