চলমান উত্তেজনার মধ্যেই এবার পাকিস্তান-ইরান সীমান্তে হোসেইন আলী জাওয়ানফার নামে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) এক কর্নেলকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশের খাশ শহরের সঙ্গে ইরানের প্রাদেশিক রাজধানী জাহেদানের সংযোগ সড়কে ‘সন্ত্রাসীদের’ গুলিতে তিনি নিহত হন।
ইরানি সংবাদমাধ্যম ইরান ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, সুন্নি মুসলিমদের চরমপন্থি গ্রুপ জইশ আল-আদল এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে। এছাড়া কর্নেল জাওয়ানফারের দুই দেহরক্ষীকেও হত্যা করেছে বলে দাবি করেছে জইশ আল-আদল।
তথ্যগুলো নিশ্চিত করে আইআরজিসির কুদস ঘাঁটি এক বিবৃতি দিয়েছে। ওই বিবৃতির বরাত দিয়ে ইরান ইন্টারন্যাশনাল আরও জানিয়েছে, কুদস ঘাঁটির সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শনে প্রদেশের সারাভান সফরে গিয়েছিলেন কর্নেল জাওয়ানফার
এর আগে, মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের পঞ্জগুর গ্রামে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। তাতে দুই শিশুসহ অন্তত চারজন নিহত হয়। ওই হামলার ৪৮ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে ইরানে প্রতিশোধমূলক হামলা চালায় পাকিস্তান। তাতে চার শিশুসহ ৯ জন নিহত হয়েছে, যাদের সবাই বিদেশি নাগরিক বলে জানিয়েছেন ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমদ ওয়াহিদী।
ইরানে হামলার পর এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইরানের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্পূর্ণরূপে সম্মান করে পাকিস্তান। আমাদের এই অভিযানের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানের নিজস্ব নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষা, যা নিয়ে কোনো আপস করা যায় না।
আবার বিবৃতির শেষ ভাগে বলা হয়েছে, ইরান একটি ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ এবং পাকিস্তানের জনগণ ইরানের জনগণের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পোষণ করে। সন্ত্রাসবাদের হুমকিসহ অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা সবসময় সংলাপ ও সহযোগিতার ওপর জোর দিয়েছি এবং যৌথ সমাধানের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো।
ইরানের চালানো হামলার বিষয়ে বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক ফাঁকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান বলেছিলেন, পাকিস্তানে চালানো যে বিমান হামলায় দুই শিশু নিহত হয়েছে, তা একটি ‘ইরানি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে’ লক্ষ্য করে চালানো হয়েছিল।
এদিকে, মঙ্গলবার চালানো হামলার জেরে ইরানের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছে পাকিস্তান। একইসঙ্গে তেহরান থেকে নিজেদের দূতকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে ইসলামাবাদ। এশিয়ার এ দুই প্রতিবেশী দেশ দীর্ঘদিন ধরেই একে অপরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করে আসছে।