এ এক রোমাঞ্চকর যাত্রা। বিমানের জানালা বন্ধ। পোল্যান্ডে বিমান নামার পর দীর্ঘ ট্রেন যাত্রা। এভাবেই গোপন সফরে গেলেন বাইডেন। স্থানীয় সময় ভোর চারটে। অন্ধকারের মধ্যে ওয়াশিংটনের বাইরে সেনা ঘাঁটি থেকে একটি বোয়িং-৭৫৭ বিমান উড়লো। বিমানটির নাম ‘সি-৩২’। বিমানে সওয়ার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
সাধারণত এই বিমানবন্দর থেকে এই বিমানে চড়ে বাইডেন বিদেশ সফরে যান না। কিন্তু এটা তো আর পাঁচটা ঘোষিত সফর নয়। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট যাচ্ছেন যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেনের রাজধানীতে। সেটাও আবার গোপন সফর। আমেরিকার কিছু কর্তাব্যক্তি ছাড়া আর কেউ জানে না এই সফরের কথা।
প্লেনটি যখন বিমানবন্দরে ছিল, তখন তার প্রতিটি জানালা বন্ধ করে রাখা ছিল। যাতে বাইরে থেকে কিছুই দেখা না যায়। আলোও বাইরে না যায়। বিমান ছাড়ার মিনিট ১৫ আগে প্লেনে ঢুকলেন বাইডেন, তার বাছাই করা কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষী, চিকিৎসকের দল, ঘনিষ্ঠ কয়েকজন পরামর্শদাতা ও দুইজন সাংবাদিক।
দুই সাংবাদিককেই আগে গোপনীয়তার শপথ নিতে হয়েছে। বাইডেনের বিদেশ সফরে সাধারণত বিভিন্ন রেডিও, টিভি, সংবাদপত্র থেকে ১৩ জন সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিক যান। এক্ষেত্রে নেয়া হয়েছিল মাত্র দুইজনকে। তার মধ্যে একজন চিত্র সাংবাদিক।
রিপোর্টার সাবিনা সিদ্দিকি হলেন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাংবাদিক। আর ছিলেন এপি এর চিত্র সাংবাদিক ইভান। তাদের বিমানবন্দরে স্থানীয় সময় রাত দুইটা ১৫ মিনিটে ডাকা হয়েছিল। তাদের ফোন নিয়ে নেয়া হয়েছিল। বাইডেন কিয়েভে পৌঁছানোর পর তা ফেরত দেয়া হয়।
আমেরিকা থেকে যাত্রা শুরু করার পর বিমানটি জার্মানির মার্কিন ঘাঁটিতে নামে জ্বালানি ভরার জন্য। তখনো বিমানের জানালা নামানো ছিল। কাউকে প্লেন থেকে বের হতে দেয়া হয়নি। পরের গন্তব্য পোল্যান্ডের বিমানবন্দর। ইউক্রেনের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই বিমানবন্দরই পশ্চিমা দেশের অস্ত্র সরবরাহের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
এখান থেকে সকলে ট্রেনে উঠলেন। সাংবাদিকরা তখনো বাইডেনকে দেখেননি। ট্রেনে মোট আটটি কামরা ছিল। প্রায় সব কামরাই ছিল নিরাপত্তা বাহিনীর দখলে। বাইডেন বরাবরই ট্রেনে চড়তে ভালবাসেন। সেনেটর থাকার সময় তিনি ট্রেনে করেই নিজের নির্বাচনকেন্দ্র ও বাড়ি থেকে ওয়াশিংটন যেতেন।
১০ ঘণ্টা পরে ট্রেন কিয়েভ পৌঁছায়। এ এক অন্য ট্রেন যাত্রা। এই যাত্রায় মার্কিন সেনা ট্রেনের সুরক্ষা দেয়ার জন্য নেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে পৌঁছচ্ছেন। রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের প্রথম বার্ষিকীর দিন কয়েক আগে। ১০ ঘণ্টা পর ট্রেন পৌঁছল কিয়েভে। তখন সূর্যোদয় হচ্ছে।
যখন ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন কিয়েভ এসেছিলেন বাইডেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এই প্রথমবার এলেন। তিনি জানালেন, কিয়েভে আবার আসতে পেরে ভালো লাগছে।
বাইডেন জানিয়েছেন, আমেরিকা গত প্রায় এক বছরে বারবার জানিয়েছে, ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা রক্ষার লড়াইয়ে তারা পাশে থাকবে। সেই বার্তা নিয়েই তিনি যুদ্ধের প্রথম বার্ষিকীতে ইউক্রেন এসেছেন। জেলেনস্কি জানিয়েছেন, বাইডেনের এই সফর ইউক্রেনকে যুদ্ধ জয়ের কাছে নিয়ে আসবে।
কিয়েভে ডিডাব্লিউয়ের প্রতিনিধি আয়া ইব্রাহিম জানিয়েছেন, বাইডেন আসার আগে পুরো শহরে সাইরেন বেজে ওঠে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেনের রাজধানীতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের পা দেয়া একটা অসাধারণ ঘটনা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাইডেন এই সফরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে একটা বার্তা দিলেন। তিনি বিশ্বকে এটাও দেখিয়ে দিলেন, আমেরিকার নেতৃত্বেই পশ্চিমা দেশগুলো এই যুদ্ধ রাশিয়ার বিরুদ্ধাচরণ করছে এবং করে যাবে। কিয়েভ থেকে বাইডেন পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে গেছেন।