ইরানে পুলিশি হেফাজতে মাহসা আমিনি নামে এক তরুণীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ চলছেই। বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৭৬ জনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ উসকে দেওয়ার অভিযোগ করেছে তেহরান। সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) এমন অভিযোগ করে ইরানের কর্তৃপক্ষ।
ইরান অভিযোগ করছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিক্ষোভকারীদের সমর্থন করছে এবং ইসলামিক প্রজাতন্ত্রকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ওয়াশিংটন সব সময় ইরানের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে। যদিও তারা বার বার ব্যর্থ হয়েছে।
ইনস্টাগ্রামে এক পোস্টে কানানি ‘দাঙ্গাবাজদের’ সমর্থন করে একটি দুঃখজনক ঘটনার অপব্যবহার, দেশের রাস্তায় এবং স্কোয়ারে লাখ লাখ লোকের উপস্থিতির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কিছু ইউরোপীয় দেশের নেতাদের দায়ী করেছেন।
ইরানে জনসম্মুখে নারীদের বাধ্যতামূলক হিজাব পরাসহ কঠোর পর্দা পালনের নিয়ম রয়েছে। এই বিধিগুলো তদারক করার জন্য রয়েছে দেশটির ‘নৈতিকতাবিষয়ক’ পুলিশ। এই পুলিশের একটি দল গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনিকে তেহরান থেকে আটক করে।
আমিনি তার পরিবারের সঙ্গে তেহরানে ঘুরতে গিয়েছিলেন। আটকের পর মাহসা আমিনি থানায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ১৬ সেপ্টেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় মাহসা আমিনির। এ ঘটনায় ব্যাপক নিন্দার ঝড় বইছে।
ইরানের রাস্তায় বিক্ষোভে নামে তরুণ তরুণীসহ বহু মানুষ। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নারীদের কেউ কেউ মাথার হিজাব খুলে পুড়িয়ে ফেলেন। কেউ কেউ জনপরিসরে নিজেদের চুল কেটে ফেলেছেন। বিক্ষোভ থেকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আল খামেনির পদত্যাগও দাবি করা হয়।
এদিকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সোমবার বলেছেন, ইরানের নৈতিকতা পুলিশ ইউনিট ও এর নেতৃত্বসহ আমিনির মৃত্যুর জন্য দায়ীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে দেশটি। অটোয়ায় সাংবাদিকদের সামনে ট্রুডো বলেন, ‘আমরা ইরানকে বারবার মানবাধিকার উপেক্ষা করতে দেখেছি, এখন আমরা মাহসা আমিনির মৃত্যু ঘিরে বিক্ষোভের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন দেখছি’।
অপরদিকে সোমবার জার্মানির বার্লিনে ইরানের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে তেহরানকে দমন-পীড়ন বন্ধ এবং শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
গত সপ্তাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের নারীদের নির্যাতনের অভিযোগে দেশটির নৈতিকতা পুলিশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং তারা আমিনির মৃত্যুর জন্য এই ইউনিটকে দায়ী করেছে।
এদিকে রোববার ইরানে নিযুক্ত যুক্তরাজ্য ও নরওয়ের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে তেহরান। পুলিশি হেফাজতে মাহসা আমিনির মৃত্যুতে ইরানজুড়ে যে বিক্ষোভ চলছে তাতে উসকানির অভিযোগে দেশ দুটির দূতকে তলব করা হয়। এর আগে ২০১৯ সালে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভের সাক্ষী হয়েছিল ইরান।