গত সপ্তাহে ইউক্রেনের মারিউপোলে শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য বিষয়ক একটি হাসপাতালে নৃশংস হামলা চালায় রাশিয়া। এতে সেখানে একটি শিশু সহ কমপক্ষে তিন জন নিহত হন। ঘটনার সময় হাসপাতালটিতে অবস্থান করছিলেন বেশ কিছু অন্তঃসত্ত্বা। বোমা হামলার পর তাদের কয়েকজনকে উদ্ধার করার চিত্র প্রকাশ পায়। কিন্তু দুর্ভাগ্য এক মায়ের। তিনি গর্ভের সন্তানকে বাঁচাতে পারেননি। নিজের জীবনও বাঁচাতে পারেননি। হামলার পর ওই নারীকে দ্রুত অন্য একটি হাসপাতালে নেয়া হয়।
উল্লেখ্য, মারিউপোলে অবস্থিত ম্যাটার্নিটি হাসপাতাল নম্বর-৩ লক্ষ্য করে গত ৯ই মার্চ বোমা হামলা চালায় রাশিয়ার বিমান বাহিনী। এই হাসপাতালটিতে মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয়। আছে নবজাতক ডেলিভারি সেকশনও। ওই হামলায় তাৎক্ষণিকভাবে একটি ৬ বছরের মেয়ে সহ কমপক্ষে তিনজন নিহত হন। একে নৃশংসতা ও যুদ্ধাপরাধ বলে অভিহিত করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনের বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে রাশিয়া গণহত্যা চালাচ্ছে এটা তারই আরেকটি প্রমাণ। ওই হাসপাতালে রাশিয়া উচ্চ শক্তিসম্পন্ন বেশ কতগুলো বোমা হামলা করে। এতে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৭ জন। তবে হামলার পর এতে জড়িত থাকার কথা প্রত্যাখ্যান করেছে রাশিয়া। জাতিসংঘ ও লন্ডনে নিযুক্ত তাদের রাষ্ট্রদূতেরা বলেছেন, ওই হামলার যেসব ছবি প্রকাশ করা হয়েছে তা ‘ফেক নিউজ’। মস্কোর দাবি, ওই ভবনটি দখলে নিয়েছে ইউক্রেনের উগ্রপন্থিরা। হাসপাতালটিতে কোনো রোগি বা ডাক্তার ছিলেন না।
হামলার পর গত সপ্তাহে মারিউপোলের ডেপুটি মেয়র সের্গেই ওরলোভ বলেছেন, তিনি নিশ্চিত রাশিয়া হামলার সময়ে জানতো তারা হাসপাতালে বোমা ফেলছে। তিনি আরও বলেন, এ নিয়ে তিনটি হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এর আগে একটি ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে এবং একটি ব্লাডব্যাংকে হামলা করে রাশিয়া। হামলার সময় মারিউপোলের হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন বিউটি বিষয়ক ব্লগার মারিয়ানা ভিশেগিরস্কায়া। তিনি বলেন, হাসপাতালের মেঝেতে শুধু পড়ে ছিল ভাঙা কাচ, আগুনের ধোয়া। জানালা এবং দেয়াল ভেঙে দূরে উড়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, জানিনা কিভাবে এটা হয়েছে। কারণ আমরা ছিলাম ওয়ার্ডের ভিতরে। বিস্ফোরণের সময়ে কেউ আত্মরক্ষা করতে পেরেছেন। অনেকে পারেননি।
এর একদিন পরে ভেরোনিকা নামে একটি সুস্থ্য কন্যাশিশুর জন্ম দিয়েছেন মিস ভিশেগিরস্কায়া। কিন্তু তার এই দুর্দশাকে একজন অভিনেত্রীর অভিনয় বলে অভিহিত করেছে লন্ডনে অবস্থিত রাশিয়ান দূতাবাস। বলেছে, তার আহত হওয়ার খবরও ভুয়া। দূতাবাসের অভিযোগ, তিনি একটি চরিত্রে অভিনয় করছেন। তিনি এমন একটি ভাব নেয়ার চেষ্টা করছেন যাতে মনে হয় আসলেই তিনি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। পরে দূতাবাসের এই পোস্ট মুছে দিয়েছে টুইটার। দূতাবাসের এমন কা-জ্ঞান দেখে এর নিন্দা জানিয়েছেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।