ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়া নতুন করে বড় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। রাজধানী কিয়েভ ছাড়াও হামলা চালানো হয়েছে উত্তরের খারকিভ, দক্ষিণের ওডেসা এবং মধ্যাঞ্চলীয় ক্রিভি রিহ শহরে। কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামো লক্ষ্য করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। ফলে বিভিন্ন শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
ইউক্রেনের জ্বালানি মন্ত্রী বলছেন, সারা দেশে প্রায় ৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে আক্রমণ করা হয়েছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনো পরিষ্কার নয়। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য কয়েকটি দল কাজ করছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।
তবে ইউক্রেনের জাতীয় জ্বালানি কম্পানি এক বিবৃতিতে বলেছে, সারা দেশে তাদের যত গ্রাহক রয়েছে তাদের অর্ধেকেরও বেশি এসব হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
৬০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর উপদেষ্টা ইউরি সাক জানিয়েছেন, দেশটির বিভিন্ন শহরে ৬০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। তিনি বলেন, ‘এসব হামলা আকস্মিকভাবে ঘটেনি। এগুলোর ব্যাপারে আমরা কয়েক সপ্তাহ ধরে সতর্ক করে দিচ্ছিলাম এবং এসব হামলাই শেষ নয়। ’
তিনি আরো বলেন, জরুরি বিভাগগুলো বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে পরিস্থিতি ‘খুব কঠিন’। রাশিয়া যখন রণক্ষেত্রে পরাজিত হচ্ছে, তখন গত দুই মাস ধরে তারা এই কৌশল নিয়েছে। ‘তারা এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় যাতে ইউক্রেন সমঝোতায় যেতে বাধ্য হয়। কিন্তু সে রকম কিছু হবে না। তাদের এই কৌশল কাজ করবে না। ’
ইউরি সাক বলেন, এসব হামলা পশ্চিমাদের কাছে এই বার্তা পাঠিয়েছে যে বিভিন্ন শহর রক্ষার জন্য ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জরুরি হয়ে পড়েছে। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন পুরো ইউক্রেন নিয়ন্ত্রণ করতে চান।
কোথায় কোথায় হামলা হয়েছে
কিয়েভ আঞ্চলিক সামরিক প্রশাসনের প্রধান ওলেকসেই কুলেবা বলেছেন, শত্রুরা বড় ধরনের আক্রমণ চালাচ্ছে।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়ার হামলায় ক্রিভি রিহ শহরে দুজন নিহত হয়েছে। দক্ষিণের খেরসন শহরেও একজন প্রাণ হারিয়েছে। হামলার ফলে শহরের একটি আবাসিক এলাকায় বেশ কিছু অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে আগুন ধরে যায়।
রাজধানী কিয়েভে বেশ কিছু বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। কর্তৃপক্ষ বলছে এসব হামলার কারণে পানির সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মেট্রো সার্ভিসও।
ওডেসা শহরের পরিস্থিতিও একই রকমের বলে জানা গেছে। ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভেও বিভিন্ন বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। ফলে এই শহর এখন বিদ্যুৎহীন।
খারকিভের মেয়র টেলিগ্রামে এক পোস্টে বলেছেন, তার শহরে ‘বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি’ হয়েছে। তবে তিনি তার বাসিন্দাদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি জানি আপনাদের বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই, উত্তাপের ব্যবস্থা নেই, পানির সরবরাহ নেই। ’
ইউক্রেনে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যে যখন তাপমাত্রা কমে যাচ্ছে তখন রাশিয়া দেশটির জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর তাদের হামলা বাড়িয়ে চলেছে। সর্বশেষ হামলার ব্যাপারে রাশিয়ার পক্ষ থেকে এখনো কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে ইউক্রেন অভিযোগ করে আসছে যে রাশিয়া প্রচণ্ড শীতকে বেসামরিক লোকজনের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
রুশ স্থল অভিযানের আশঙ্কা
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী বছরের শুরুতে রাশিয়া বড় ধরনের স্থল অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।
ঊর্ধ্বতন জেনারেলরা বলছেন, পূর্বাঞ্চলীয় দনবাস অঞ্চলে, দক্ষিণে, এমনকি রাজধানী কিয়েভ অভিমুখেও এসব অভিযান হতে পারে।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেকসেই রেজনিকফ মনে করছেন, নতুন বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এই অভিযান শুরু হতে পারে, যখন রুশ সেনাবাহিনীতে সংগৃহীত তিন লাখ সৈন্যের অর্ধেকের প্রশিক্ষণ শেষ হয়ে যাবে।
ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ানকে রেজনিকফ বলেছেন, ‘জয়ের জন্য ক্রেমলিন নতুন রাস্তা খোঁজার চেষ্টা করছে। ’
তবে পশ্চিমা বিশ্লেষকরা বলছেন, স্থলপথে রাশিয়ার সফল অভিযান পরিচালনার ক্ষমতা ক্রমেই দুর্বল হয়ে আসছে।
ব্রিটেনের ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা অ্যাডমিরাল টনি রাডাকিন বলেছেন, মস্কোর জন্য এই যুদ্ধ আরো কঠিন হয়ে পড়বে। কারণে তাদের গোলাবারুদের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।