পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার গোপালপুর এলাকার তাঁতপল্লী একসময় ৫০০ তাতেঁর খটখট শব্দে মুখরিত থাকলেও এখন তা বন্ধের পথে। ঐতিহ্য আর সংগ্রামের প্রতীক এ তাঁত শিল্পের অবস্থা এখন করুণ।
স্থানীয় জরিপে জানা যায়, বর্তমানে তাঁতিপাড়ায় মেটে তাঁতের সংখ্যা ২৫০ এর কাছাকাছি। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে আসে তাঁতিদের দূঃখ দূর্দশার চিত্র। পৈত্রিক পেশা ছাড়তে না পারায় ধারদেনা করে কোনো রকম টিকে রয়েছে এখানকার তাঁতি সম্প্রদায়।
একসময় এখানকার লুঙ্গি ক্রয় করার জন্য মহাজনেরা নিয়মিত আসা যাওয়া করতেন।এখন তাদের দেখা যায় না।
কলের তাঁত, সুতার অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি, ঊর্ধ্ব গতিতে শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি, শ্রমিক সংকট, পুঁজির অভাব নানা কারণে মেটে তাতঁ ছাড়ছেন অনেকে।
লুঙ্গি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধি পেলেও দাম কমেছে এখানকার লুঙ্গির। আগে ১ থান(৪ পিস) লুঙ্গি পাইকারি বিক্রি হত ২০০০ টাকা, বর্তমানে তা ১৫৫০-১৬০০ টাকায় নেমে এসেছে।
স্থানীয় মহাজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, লুঙ্গি পর্যাপ্ত পরিমাণ উৎপাদন হলেও বড় বড় মহাজনদের কাছে সেগুলোর আশানুরূপ সরবরাহ না থাকায় বাজারজাত করা সম্ভব হয়না।
স্থানীয় তাঁতিরা জানান, ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সবচেয়ে খারাপ সময় যায় তাঁতীদের। এসময় মহাজনেরা খুব স্বল্প পরিমাণে লুঙ্গি ক্রয় করেন। তবে করোনা আসার পর সবসময়ই খারাপ যাচ্ছে তাঁতিদের।
সরেজমিনে জানা যায়, এখানকার ২০০ পরিবারের প্রায় ৯০০ জন মানুষ বংশানুক্রমে তাঁতশিল্পের সাথে জড়িত। গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ২-৩ টি তাঁত রয়েছে। আর সবগুলোই বাঁশ কাঠের।
স্থানীয় শিক্ষক আব্দুল মমিন বলেন, সংগ্রাম আর ঐতিহ্যের জীবনে আয় কম থাকলে তা টিকে থাকা কঠিন। এখানকার মানুষের আয় রোজগার কম। কাজের প্রতি চাহিদাও এখন কম।
এখানে পুরুষের পাশাপাশি মহিলারাও সমান তালে কাজ করেন। সুইটি খাতুন নামের একজন নারী তাঁতি বলেন, বাড়ির বাইরে যেতে পারিনা।তাই বাড়িতেই তাঁতে লুঙ্গি বুনাই। কিন্তু ন্যায্য মজুরি পাইনা।
তবে, মেটে তাঁতের পাশাপাশি এখানে শুরু হয়েছে মেশিনের তাঁতের ( পাওয়ারলুম) কাজ। যার ফলে মেটে তাঁত ছেড়ে অনেকেই পাওয়ারলুমের দিক ঝুঁকছেন।
তাঁতিদেরকে অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য প্রদানের জন্য তাঁতবোর্ড(সাথিয়া) কাজ করে যাচ্ছে।তবে কোনো প্রকার সহয়োগিতা না পাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন স্থানীয় মহাজন হারুন প্রাং। এসময় তাঁতিরা সরকারি সার্বিক সহযোগিতা ও হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।