সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেম এম খালিদ বলেছেন, কোভিড-১৯ এর কারণে দেশে অনেক অগ্রজ শিল্পী ও কুশলীরা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তাদের এই শূন্যতা নতুন প্রজন্মকে ভোগাবে। এটা সংস্কৃতির জন্য অনেক বড় ক্ষতি। আমরা চাই না করোনায় আর কোনো অগ্রজ গুণী আমাদের ছেড়ে চলে যাক, তাই করোনার টিকা যেন শিল্পী ও কুশলীরা আগে পান সে ব্যাপারে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় চেষ্টা চলাচ্ছে।
বাংলাদেশ কালচারাল রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিআরএ) রজতজয়ন্তী উপলক্ষে বিসিএরএ পদক প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় আজ শনিবার তিনি এসব কথা বলেন। বরেণ্য অভিনেতা আলী যাকেরের মৃত্যুতে সংস্কৃতি অঙ্গন বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, উনি ছিলেন একজন শুদ্ধ অভিনয় শিল্পী। তারচেয়ে বড় কথা উনি সবকিছু নিয়েই ভাবতেন আমাদের ভাবতেনও।
নতুন প্রজন্ম ওনার অভাববোধ করবে। তারমতো আরো অনেক গুণী শিল্পী-কুশলীরা এই করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত হয়েছেন। কিছুদিন আগে আমাদের নাট্যজন আতাউর রহমানও করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, ভালো লাগছে তিনি এখন সুস্থ হয়ে এই মঞ্চেই উপস্থিত আছেন। আমরা আর গুণীদের এভাবে হারাতে চাই না সে জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেন করোনা টিকা আমাদের সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষগুলো পায় সেই চেষ্টা করছি।
বাংলাদেশের হলগুলোতে এক সময় সপ্তাহের পর সপ্তাহজুড়ে সিনেমা চলতো। দীর্ঘলাইন পাড়ি দিয়ে হলে ঢুকতাম। সেটা এখন অতীত। এখনকার হলগুলো বাণিজ্যিক গুদামে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
মন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নিমজ্জিত চলচ্চিত্রকে ঘুরে দাঁড়াবার আয়োজন চলছে। সে লক্ষ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় প্রত্যেক জেলায় শিল্পকলার অধীনে একটি করে সিনেপ্লেক্স নির্মাণের নকশা চূড়ান্ত করেছে। আশা করছি শিগগিরই এর বাস্তবায়ন দেখা যাবে।
এর আগে ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগ দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাড. ফজলে রাব্বী মিয়া এমপি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে সংস্কৃতির ঊর্বর ভূমি। এদেশে, জারি, সারি, ভাটিয়ালি গান আছে, লোক সংস্কৃতি আছে এগুলো নিয়েই আমাদের বাঙালি সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতি আমাদের পরিচয় বহন করে। সংস্কৃতি চর্চা মনের কলুষতা দূর করে। সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে দেশকে বিশ^ দরবারে তুলে ধরতে হবে।
বাংলাদেশ কালচারাল রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিআরএ) কর্তৃক আজীবন সম্মাননা পদক পেয়েছেন আন্তর্জাতিক নাট্যব্যক্তিত্ব মঞ্চসারথী আতাউর রহমান। তার হাতে পদক তুলে দেন, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এ ছাড়া বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোল্লা জালাল, ভারতে নবনিযুক্ত প্রেস মিনিস্টার বিএফইউজের মহাসচিব শাবান মাহমুদ, করোনায়কালে বিশেষ অবদানের জন্য ফায়ার ব্রিগেড, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে বিশেষ সম্মাননা পদক তুলে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া অভিনয়ে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী মৌসুমী, ফেরদৌস, নাসরিন, নতুন প্রজন্মের নায়িকা অধরা খান, চলচ্চিত্র নির্মাতা হাসিবুর রেজা কল্লোল, জেসমিন আক্তার নদী এবং আবহমান বাংলার চিরন্তন কাহিনী নিয়ে খায়রুন সুন্দরী চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য একে সোহেলের হাতে ক্রেস্ট দেওয়া হয়।
নাট্যজগতে অনন্য অবদানের জন্য মাহফুজ আহমেদ, মধ্যরাতের সেবা নাটকে অসাধারণ অভিনয়ের নতুন প্রজন্মের অভিনেতা রাশেদ সীমান্ত, সমাজ সচেতনতামূলক নাটক রচনার জন্য টিপু আলম মিলন, বিজ্ঞাপন নির্মাতা সৈয়দ নাবিল আশরাফ এবং সংবাদ পাঠে নিউজ প্রেজেন্টার নাদিরা আশরাফের হাতে ক্রেস্ট দেওয়া হয়।
সংগীত জগতে অনন্য অবদান রাখায় সম্মাননা বাপ্পা মজুমদার,রুমানা ইসলাম, মনির খান এবং গানবাংলা টেলিভিশনের মাধ্যমে বাংলা গানকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার জন্য কৌশিক হোসেন তাপস। এ বিভাগে আরও বিশেষ সম্মাননা পান গীতিকার শাহান কবন্ধ, সংগীতশিল্পী সাহিনা হক ও অনন্যা রুমা।
চলচ্চিত্র সাংবাদিকতায় সম্মাননা পান কামরুল হাসান দর্পণ, বিনোদন সাংবাদিকতায় মনজুর কাদের জিয়া এবং শেখ আরিফ বুলবন। নৃত্য বিভাগে শ্রাবন্তী রহমান এবং ইভেন্ট অর্গানাইজার হিসেবে মো. খাদিমুল ইসলাম সালমান।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দুলাল খানের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন অভি চৌধুরী। অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান হলেন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব বেনু শর্মা ও সদস্য সচিব সুমন পারভেজ।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন