English

25 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪
- Advertisement -

শিবগঞ্জে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ঘানিশিল্প

- Advertisements -

আধুনিক সভ্যতার ক্রমবিকাশে খাঁটি সরিষার তেলের ঘানিশিল্পের বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার কলু সম্প্রদায় এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। ফলে খাঁটি সরিষার তেলের স্বাদ পাচ্ছে না উপজেলার সাধারণ মানুষ। আগে দিনরাত গরু দিয়ে কাঠের ঘানির সাহায্যে ফোটায় ফোটায় নিংড়ানো খাঁটি সরিষার তেল বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জের হাটে-বাজারে মাটির হাড়িতে করে বিক্রি করা হতো। এ তেল বিক্রি করেই জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতেন এক শ্রেনীর কলু সম্প্রদায়। যুগের পরিবর্তনে উপজেলায় দু-এক জন ছাড়া কালের গর্ভে এখন শিল্পটি বিলুপ্ত প্রায়।
দিন বদলের সাথে সাথে আধুনিকতার ছোঁয়ায় নতুন নতুন প্রযুক্তি শিল্পে ব্যবহার হলেও বগুড়ার শিবগঞ্জের পৌর এলাকার কলুমগাড়ি গ্রামে এখনো শিল্পটি বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আলহাজ¦ মোঃ আবু জাফর সিদ্দিক। তারমতে বংশ পরমপরায় দের’শ বছর যাবৎ তারা এ পেষায় আছেন। উপজেলার ময়দানহাট্টা, মোকামতলা, কিচক, আটমুল, বুড়িগঞ্জ বিহারহাটসহ এলাকার বিভিন্ন এলাকায় এক সময় ঘানিশিল্পের প্রচলন ছিলো। এখন আর উপজেলার এসব এলাকায় শিল্পটি চোখে পড়েনা। আবু জাফর নিজে তিন পুরুষের সময় ধরে এ পেশা দেখছেন। তার দাদা মৃত মানিক উল্লাহ ঘানির খাঁটি সরিষার তেল বিক্রি করতেন।
দাদার পর বাবা মৃত হোসেন আলীও একই পেশার জীবিকা নির্বাহ করেছেন। বর্তমানে সত্তর বছর বয়সে এসেও আলহাজ¦ মোঃ আবু জাফর সিদ্দিক কলু সম্প্রদায়ের এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে শিল্পটি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে তার ২ ছেলে ৫ মেয়ে ও স্ত্রী রোকেয়া বেগমকে নিয়ে তার সংসার। বাপ-দাদার পেশা ছাড়তে পারেননি তিনি। এখনো আকড়ে ধরে আছেন পেশাটিকে।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘানিতে তেল মারায়ের কাজ করছেন আবু জাফর সিদ্দিক। তার এ পেষার সাথে ছেলে মেয়ে কেহই জড়িত না হলেও। স্ত্রী রোকেয়া বেগম ৪৮ বছর যাবৎ প্রতিনিয়তই স্বামীকে ঘানিতে সারিষা মাড়ায়ের সহযোগিতা করছেন। কলু আবু জাফর সাংসারিক অন্য কাজে ব্যস্ত থাকলে তার অবর্তমানে স্ত্রী তেল মারায়ের কাজ করে থাকেন। তার ঘানিতে এক মন সরিষা থেকে ১৫ থেকে ১৬ লিটার তেল আনতে পারেন। তিনি প্রতিদিন ২৭ কেজি সরিষা ঘানিতে পিষেন এবং তা থেকে গড়ে ৮ থেকে ৯ লিটার তেল বের হয়।
কলু আবু জাফরের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, ঘানির সাথে একটি করে গরুর চোখ বেঁধে কাঁধে জোয়াল লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। পরে গরুটি দিনভর চরকীর মতো আপন মনে ঘুরতে থাকে। তখন ঘানির নল দিয়ে টিপটিপ করে তেল বের হতে থাকে। ওই তেল মাটির কলসি করে মহাস্থান হাটে নিয়ে যায় বিক্রি করতে। বাজারে মেশিনে সরিষা মাড়ানোর তেলের চেয়ে তার তেলের চাহিদা অনেক বেশি। তিনি প্রতি লিটার তেল বিক্রি করেন ১৮০ টাকা দরে।
কলু জাফরের পরিচিত কিছু ক্রেতা আছেন তারাই প্রতিনিয়ত তার এই খাঁটি তেল কিনে থাকেন। কৃত্রিম সরিষার তেল বাজার দখল করলেও শিবগঞ্জ উপজেলার কলু আবু জাফরের তেলের কদর একটুকুনও কমেনি। ফলে খাঁটি সরিষা তেলের স্বাদ পাচ্ছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।
শিবগঞ্জের মহাস্থান হাটে তেল কিনতে আসা ক্রেতা তৈয়ুব আলী বলেন, আমি কলু জাফরের কাছ থেকে প্রায় চল্লিশ বছর যাবৎ সরিষার তেল কিনছি। খুব ভালো তেল, বাজারে কৃত্রিম সরিষার তেলের চেয়ে দাম একটু বেশি হলেও আমি এই তেলই ক্রয় করি।
আমার পরিবার এই তেল পছন্দ করে। তবে অনেকের মতে এখনও খাঁটি সরিষার তেল বলতে ঘানির তেলকেই বুঝিয়ে থাকেন। ঘানির তেলের এই ব্যাপক চাহিদার পরও আধুনিক প্রযুক্তির প্রসারের কারণে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ঘানিশিল্প।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন