English

24 C
Dhaka
শনিবার, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫
- Advertisement -

ভিটামিন-সাপ্লিমেন্ট খেয়ে লিভারের ক্ষতি করছেন না তো

- Advertisements -

হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ উদ্ভিদ, ভেষজ, খনিজ এবং ধাতু ব্যবহার করে বিভিন্ন অসুখের চিকিৎসা করে আসছে। তবে প্রাচীন জ্ঞানে ভরা উপাদানগুলো এখন ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, সফট জেল, পাউডার, বার, গামি এবং তরল আকারে ফার্মেসির তাক এবং সোশ্যাল মিডিয়া ফিডগুলো ভরে রেখেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে করা একটি জরিপ থেকে জানা যায়- ৫২% রোগী মনে করেন যে চিকিৎসাকালে তাদের লক্ষণগুলো উপেক্ষা করা হয় ও সঠিকভাবে বিশ্বাস করা হয় না। তাই অনেকেই প্রাকৃতিক ‘ডু-ইট-ইয়োরসেল্ফ’ ওষুধের দিকে ঝুঁকছেন, আর এতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাপ্লিমেন্ট অন্তর্ভুক্ত থাকে।

ফলে সাপ্লিমেন্ট শিল্প বেড়ে চলেছে রকেটের গতিতে, কিন্তু ‘প্রাকৃতিক উপাদান’ এর উল্লেখ থাকায় এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা হচ্ছে কম! ২০২২ সালের রিপোর্ট বলছে, আমেরিকায় লিভার ইনজুরির ৪৩% আর লিভার ফেইলিউরের ১৯% এর পেছনে দায়ী এই সাপ্লিমেন্টগুলো। মজার ব্যাপার হলো, গত ২৫ বছরে এই সংখ্যা প্রায় আট গুণ বেড়ে গেছে! তাই সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার আগে দুবার ভাবতে হবে।

কোন পুষ্টির ঘাটতি এবং সয়সের জন্য নির্দিষ্ট সাপ্লিমেন্টেশন উপকারী হতে পারে। গর্ভবতী নারীরা বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধের জন্য ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করেন। বয়স্ক ব্যক্তিরা অতিরিক্ত বি-টুয়েলভ থেকে উপকৃত হন। অনেক গবেষণা বলে যে ওমেগা-৩ হৃদপিন্ড ও লিভারের জন্য ভালো। প্রোবায়োটিক্স খাওয়া ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা আইবিএস উপশম করতে পারে। অসংখ্য গবেষণা এই ব্যবহারগুলোকে সমর্থন করে, তবে অন্যান্য বেশিরভাগ দাবিগুলোর পেছনে কোন গবেষণালব্ধ প্রমাণ পাওয়া যায় না।

ইদানিং হলুদ চোখ, পেটে ব্যথা, আর ক্লান্তি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন অনেকেই—এগুলো লিভার ফেইলিউরের লক্ষণ। আর এই সমস্যার পেছনে দায়ী হচ্ছে সাপ্লিমেন্ট, এমনকি যেগুলো ‘ক্লিনিকালি টেস্টেড’ বলে দাবি করা হয়! যেমন, গ্রিন টি এক্সট্র্যাক্ট, যা ওজন কমানোর নামে বিক্রি হয়; বা বডিবিল্ডিং সাপ্লিমেন্ট, যেগুলোতে কখনো কখনো স্টেরয়েড মেশানো থাকে। এছাড়াও, চুল বৃদ্ধি থেকে মানসিক স্বাস্থ্য—সব কিছুর জন্যই এখন মাল্টি-ইনগ্রেডিয়েন্ট সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায়, কিন্তু এগুলোর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কতটা নিরাপদ, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

এক্সপার্টরা বলছেন, সাধারণ ভিটামিন বা মিনারেল সাপ্লিমেন্ট বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিরাপদ, কিন্তু উচ্চ ডোজে লিভারের ক্ষতি করতে পারে। বিশেষ করে ভেষজ বা হার্বাল সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার আগে সাবধান! যেমন, গ্রিন টি এক্সট্র্যাক্ট লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, আর বডিবিল্ডিং সাপ্লিমেন্ট পিত্ত নালী বন্ধ করে দিতে পারে। মাল্টি-ইনগ্রেডিয়েন্ট সাপ্লিমেন্টগুলো তো আরও ঝামেলার—এগুলোর প্রতিটি উপাদান আলাদা করে পরীক্ষা করা কঠিন, ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বোঝা আরও মুশকিল।

সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, সাপ্লিমেন্ট শিল্পে ভেজাল আর মিসলেবেলিং এর ছড়াছড়ি। অনেক সময় সস্তা উপাদান ব্যবহার করে খরচ কাটছাঁট করা হয়, আবার কখনো কখনো সাপ্লিমেন্টে সীসা, আর্সেনিক, এমনকি সিন্থেটিক ড্রাগ পর্যন্ত মিশে যায়! এগুলো ডিমেনশিয়া, সংক্রমণ, বা হাড় ভাঙার মতো সমস্যা তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে বয়স্ক বা দুর্বল ইমিউন সিস্টেম যাদের, তাদের জন্য তো আরও বিপজ্জনক। তাই, সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার আগে ভালো করে রিসার্চ করা জরুরি। না হলে, স্বাস্থ্য ভালো করার চেষ্টায় উল্টো হিতে বিপরীত হতে পারে!

ম্যাসাচুসেটসের ব্রিগহাম অ্যান্ড উইমেন্স হাসপাতালের একজন চিকিৎসক, মহামারী বিশেষজ্ঞ এবং এন্ডোক্রিনোলজিস্ট এবং হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের অধ্যাপক জোঅ্যান ম্যানসন বলেন, সবাই যাদুর বড়ি এবং যৌবনের এলিক্সার সন্ধান করছে— এমন কিছু যা খুব সহজেই একটি ট্যাবলেটের মতো খেয়ে ফেললে বয়স বাড়ার প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যাবে বা দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধ করা যাবে। বাজারে থাকা হাজার হাজার সাপ্লিমেন্টের বেশিরভাগই কার্যকারিতা বা নিরাপত্তার জন্য পরীক্ষা করা হয়নি। কিন্তু ৮৪% ভোক্তা নিশ্চিত যে এই পণ্যগুলো নিরাপদ এবং কার্যকর। তাই ক্রেতাদের সতর্ক হতে হবে।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ

আল কোরআন ও আল হাদিস

- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন