ডা. শাহজাদা সেলিম: সারাবিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ ও ইনসুলিন গ্রহণের পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন পদ্ধতিতেও ব্যবস্থাপনা বজায় রাখা জরুরি।
ডায়াবেটিসে খাদ্য ব্যবস্থাপনার অর্থ আসলে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ বা ডায়েট কন্ট্রোল নয়। যদিও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাধারণ মহলে এ ধরনের ভ্রান্ত ধারণাই বিদ্যমান। আসলে খাদ্য ব্যবস্থাপনার মূল উদ্দেশ্য হলো, ব্যক্তির জন্য সময় ও প্রয়োজনমতো স্বাস্থ্যসম্মত সুষম খাদ্য নিশ্চিত করা। ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তির খাদ্য ব্যবস্থা কতগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। যেমন– বয়স, লিঙ্গ, ডায়াবেটিসের ধরন, ওজন, শারীরিক পরিশ্রমের ধরন, অন্য কোনো শারীরিক অসুস্থতা বা জটিলতা আছে কিনা, গর্ভাবস্থায় স্তন্যদানকারী মায়ের অবস্থা ইত্যাদি।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্যের বিভাজন প্রাত্যহিক প্রয়োজনীয় মোট ক্যালরি একজন ডায়াবেটিস রোগী সংগ্রহ করবেন তিনটি মূল খাবার (সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার, রাতের খাবার) এবং দু-তিনটি টিফিন (মধ্য সকাল, বিকেল ও শোবার আগে) থেকে। সে ক্ষেত্রে সকালের নাশতায় থাকবে মোট ক্যালরির ২০ শতাংশ। দুপুরের খাবারে থাকবে মোট ক্যালরির ৩৫ শতাংশ। রাতের খাবারে থাকবে মোট ক্যালরির ৩০ শতাংশ। বাকি ১৫ শতাংশ ক্যালরি দু-তিনটি টিফিনে বিভক্ত করে নেবে।
একজন ডায়াবেটিস রোগীর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত দক্ষতা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকা জরুরি। এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, একই বিষয় কখনোই সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য নয়।
তাই খাদ্য ব্যবস্থা নির্ধারণের আগে যে বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন, সেগুলো হলো–
রোগীর ডায়াবেটিসের ধরন, বর্তমান শারীরিক, মানসিক ও জীবনযাত্রার ধরন অনুযায়ী খাদ্য ব্যবস্থা, ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধা ও পছন্দ।
খাদ্য ব্যবস্থাবিষয়ক জ্ঞাতব্য উপাদান হলো–
সুস্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা;
খাদ্য পিরামিডের ধারণা;
স্বাস্থ্যকর খাদ্য বাছাই-সিগন্যাল পদ্ধতি;
থালা মডেল;
খাদ্য পরিবর্তন ব্যবস্থা;
শর্করা গণনা ইত্যাদি;
সুস্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা।
ডায়াবেটিস রোগীদের অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের মূলনীতিগুলো মেনে চলা উচিত। যেমন–
বিভিন্ন ধরনের খাবার গ্রহণ করা;
রুটি, শস্যদানা থেকে তৈরি খাবার, ফল, শাকসবজির ওপর গুরুত্ব দেওয়া;
কম চর্বিযুক্ত খাবার বা কম তেলে তৈরি খাবার পছন্দ করা;
আদর্শ ওজন নিশ্চিত করা ও ধরে রাখা– সুষম খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের মাধ্যমে লবণ, ক্যাফেইন ও অ্যালকোহলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা।
লেখক: বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক