কিডনি যখন তার কার্যকর ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে হারাতে থাকে তখনই শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। যদি কিডনির রোগ বেশি বেড়ে যায়। তখনই রক্তে দূষিত পদার্থ বাড়তে থাকে এবং রোগী অসুস্থতা বোধ করতে থাকে। সেই সঙ্গে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, অ্যানিমিয়া, হাড়ের দুর্বলতা, পুষ্টিহীনতা, মেটাবলিক ডিস্ফাংশনসহ স্নাযুবিক দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। এই সমস্যার কারণেই কিডনির টিউমার থেকে ক্যান্সারসহ ক্রনিক কিডনি রোগ হতে পারে।
কিডনি ক্যান্সার: বিভিন্ন ধরনের কিডনি রোগজনিত ক্যান্সার হতে পারে। এর মধ্যে ট্রানজিশনাল সেল কার্সিনোমা- পেলভিস ইউরেটার জংশনে হয়ে থাকে। রেনাল সারকোমা- কিডনি সংযোগ সেলে শুরু হয়। উইলমের টিউমার- বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়। তবে রেনাল সেল কার্সিনোমা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এর দরুন শরীরের উচ্চ ক্যালসিয়াম স্তর এবং রক্তে লাল কোষ বৃদ্ধি পেয়ে প্যারোনো প্লাস্টিক সিনড্রোম দেখা যায়।
এই টিউমার থেকে সব ধরনের ক্যান্সারের সাইন সিমট্রোম প্রকাশ পায় যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা লোপ পেয়ে অটো ইমিউন সৃষ্টির মাধ্যমে শরীরের সেলগুলো ধ্বংস করে দেয়। প্রথমদিকে কিডনি ক্যান্সার এর খুব একটা লক্ষণ দেখা যায় না। টিউমার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই লক্ষণের উপস্থিতি প্রকাশ পায় যেমন প্রস্রাবে রক্ত, পেটে শক্ত পিণ্ড ধারণ, ক্লান্তিবোধ ও পেট ফুলে যাওয়া।
ক্রনিক কিডনি ডিজিজ: কিডনি খারাপ হতে কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর লেগে যায়। ধীরে ধীরে কিডনির কার্যকরী ক্ষমতা লোপ পায় এবং শরীর থেকে বর্জ্য ও তরল পদার্থ বের করতে নেফ্রোনের ওপর চাপ পড়ে।
ক্রনিক কিডনি ডিজিজের কারণ: নিদ্রাহীনতা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও স্থূলতা। ক্রনিক কিডনি ডিজিজ কে তিন স্টেজে আমরা ভাগ করে থাকি- প্রাথমিক অবস্থায় খুব একটা রোগীর অসুবিধা হয় না। হঠাৎ করেই রোগীর উচ্চরক্তচাপ ও মুখমণ্ডল ফুলে যেতে থাকে। মেডিকেল চেকআপে রোগীর রক্তে ক্রিয়েটিনিন ও ইউরিয়া বেড়ে যায়। দ্বিতীয় ধাপে রোগীর কিডনির কার্যকরী ক্ষমতা প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ কমে যায় এতে রক্তের ক্রিয়েটিনিন ইউরিয়ার মাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। শারীরিক দুর্বলতা রক্তস্বল্পতা, ফোলা ভাব ও রাতে প্রস্রাবের মাত্রা বেড়ে যায়। শেষ স্টেজে রোগীর কিডনি কার্যকরী ক্ষমতা ৯০ ভাগ লোপ পায়। কিডনি ডায়ালিসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না। প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা করলে রোগ নিরাময় বা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিডনি খারাপ হওয়ার দ্রুততাকে ধীরগতি সম্পন্ন করা যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ব্যাপক উন্নতি সাধন করেছে। সেই সঙ্গে হোমিওপ্যাথিক ওষুধের গুণগতমানও উন্নত হয়েছে। সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করে ওষুধ প্রয়োগ করলে দ্রুত সুফল পাওয়া যায়। কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিক কিছু ওষুধ ব্যবহৃত হয়। যেমন- লাইকোপোডিয়াম, ক্যান্থারিস, এপিস মেল, কুপপ্রাম মেট, কুপ্রাম আর্স, বার্বারিস ইত্যাদি। লক্ষণ অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এই ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।
লেখক: হোমিওপ্যাথিক কনসাল্টেন্ট (বিএইচএমএস) ডিএমইউসিএস ডব্লিউ (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ও প্রভাষক, উত্তরা হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ।