অস্টিওপোরোসিস হলো ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত একটি রোগ, যে রোগের কারণে হাড়ের ঘনত্ব কমে গিয়ে হাড় হালকা ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। ঝুঁকি বেড়ে যায় হাড় ভেঙে যাওয়ার। তাই এ রোগ সম্পর্কে সবার, বিশেষ করে বয়স্ক পুরুষ ও নারীদের সতর্ক থাকা খুবই প্রয়োজন। কারণ বয়স্ক ব্যক্তিদের হাড় ভেঙে যাওয়া সমস্যাটি খুবই সাধারণ রোগ। হাড় ভেঙে না যাওয়া পর্যন্ত সাধারণত এ রোগের বিশেষ কোনো উপসর্গ দৃশ্যমান হয় না। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হাড় এতটাই দুর্বল হয়ে যেতে পারে যে, সামান্য জোর দিলে বা এমনি-এমনি ভেঙে যায়। প্রাপ্তবয়স্কদের হাড়ের ঘনত্ব ২ দশমিক ৫ মান বিচ্যুতির নিচে হলে অস্টিওপোরোসিস রোগ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।
রোগের উপসর্গ : অস্টিওপোরোসিসকে ‘সাইলেন্ট’ রোগ বলে অভিহিত করা হয়। এই রোগের কারণ ধীরে ধীরে শরীর ভাঙতে শুরু করে, যা টের পাওয়া যায় না; যতক্ষণ না ফ্র্যাকচারের পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছায়। ফ্র্যাকচার মূলত হাতের কব্জি, শিরদাঁড়া ও হাঁটুতে হয়। এই অসুখের উপসর্গের মধ্যে জরুরি হলো, হঠাৎ দৈহিক উচ্চতা কমতে থাকা। কোমরে বা শরীরের কোনো অংশে সারাক্ষণ যন্ত্রণা করা। এই রোগে হাড়ের যে অংশ বেশি ভাঙে তা হলো- মেরুদণ্ডের মধ্যে কশেরুকার হাড়, হাতের হাড় ও কোমরের হাড়। হাড় না ভাঙা পর্যন্ত সাধারণত কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না।
রোগের কারণ : অস্টিওপোরোসিস মূলত হাড়ের ঘনত্ব কম হলে হয়। হাড়ের ঘনত্ব বাড়ে মূলত ১৮ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এই ঘনত্ব কমে যায়। ৪০ বছর বয়সের আগে হাড়ের বৃদ্ধি বেশি হয়, ক্ষয় কম হয়। এর পর থেকে হাড়ের ক্ষয় বেশি হয়, বৃদ্ধি কম হয়। হাড়ের ঘনত্ব কমার পেছনে একাধিক কারণ কাজ করে। যেমনÑ লিঙ্গ, পুষ্টি, বয়স ও ডায়াবেটিস বা হাইপোথাইরয়েডের মতো রোগ।
আক্রান্ত বেশি হয় যারা : পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তি, যাদের প্রতিদিনের খাবারে ক্যালসিয়ামের অভাব, শরীরচর্চার বিশেষ সুযোগ নেই ও মেনোপজ-পরবর্তী সময়ে নারীদের বেশি হয়। পুরুষদের মধ্যে যাদের শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কম, তাদের জন্য এ অসুখের ভয় থেকেই যায়। অনেক সময় মদ্যপান, ধূমপান, শরীরে একাধিক ফ্র্যাকচার থাকার কারণে অস্টিওপোরোসিস হতে পারে।
প্রতিরোধের উপায় : প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে। পরিমাণমতো নিয়মিত ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-ডি জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। কারণ হাড়ের প্রধান উপাদান হচ্ছে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান দরকার। পানি হাড় থেকে অপ্রয়োজনীয় টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। অন্তত এক ঘণ্টা করে প্রতিদিন শরীরে রোদ লাগানো প্রয়োজন, যাতে হাড় মজবুত হয়। জীবনধারা পরিবর্তন, যেমন- ধূমপান বন্ধ করা, মদ্যপান না করা, ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের ঝুঁকি চিহ্নিত করে চিকিৎসা করানোর মধ্য দিয়ে অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করা সম্ভব।
লেখক : অর্থোপেডিক ট্রমা ও স্পাইন সার্জন ও সিনিয়র কনসালট্যান্ট, নিটোর (পঙ্গু হাসপাতাল)
চেম্বার : আলোক হাসপাতাল লিমিটেড
মিরপুর-১০, ঢাকা