পৃথিবীর অন্তত ১২টি দেশের ৮০ জনেরও বেশি লোকের দেহে মাস্কিপক্স সংক্রমণ নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, অন্য আরো ৫০ জন এতে আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে এবং মনে করা হচ্ছে যে আরো সংক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যাবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ৫০ জন কোন দেশের তা প্রকাশ করেনি।
এক বিবৃতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এই সংক্রমণ অস্বাভাবিক কারণ এগুলো এমন দেশে ঘটছে যেগুলো এ ভাইরাসটির স্বাভাবিক আবাসস্থল নয়।
ইতোমধ্যে নয়টি ইউরোপিয়ান দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াতে মাস্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে। এই রোগটি সাধারণত মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার দুর্গম অঞ্চলে হতে দেখা যায়।
ইউরোপের যে দেশগুলোতে মাংকিপক্স আক্রান্ত লোক পাওয়া গেছে তার মধ্যে আছে যুক্তরাজ্য, স্পেন, পর্তুগাল, জার্মানি, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইতালি ও সুইডেন।
মাস্কিপক্স এমন একটি ভাইরাসবাহিত রোগ যা সাধারণত মৃদু অসুস্থতা সৃষ্টি করে এবং অধিকাংশ আক্রান্ত ব্যক্তিই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। এটি খুব সহজে একজন মানুষ থেকে আরেকজন মানুষের ছড়াতে পারে না এবং মনে করা হয় বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই মাংকিপক্স ছড়ানোর সম্ভাবনা কম।
মাস্কিপক্সের কোনো সুনির্দিষ্ট টিকা নেই। তবে গুটি বসন্তের টিকা নিলে তা মাস্কিপক্সের বিরুদ্ধেও ৮৫ শতাংশ সুরক্ষা দিয়ে থাকে-কারণ এ দুটি ভাইরাসের অনেক মিল আছে।
বিজ্ঞানীরা ‘বিস্মিত’
বিবিসির স্বাস্থ্য বিষয়ক সংবাদদাতা জেমস গ্যালাহার বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারির অভিজ্ঞতার পর মাস্কিপক্সের খবর শুনে যারা উদ্বিগ্ন বোধ করছেন তাদের স্পষ্ট করে দেয়া দরকার যে, এটা কোভিডের মতো কিছু নয়। এ ভাইরাস একজন থেকে আরেকজনের দেহে ছড়াতে “অনেকটা সময়ের জন্য ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে” আসার দরকার হয়।
তবে যে ব্যাপারটা বিশেষজ্ঞদের বিস্মিত করেছে তা হলো-আগে কারো মাস্কিপক্স হলে তার সাথে পশ্চিম বা মধ্য আফ্রিকার সংযোগ সহজেই বের করা যেতো।
কিন্তু এবার এই প্রথমবারের মত ভাইরাসটি এমন লোকের মধ্যে দেখা যাচ্ছে যাদের সাথে ওই দুটি অঞ্চলের কোন স্পষ্ট যোগাযোগ দেখা যাচ্ছে না। এখন যাদের মাস্কিপক্স হচ্ছে তারা কোথা থেকে সংক্রমিত হচ্ছে-তাও স্পষ্ট নয়।
তাই ভাইরাসটির আচরণে কোন পরিবর্তন হয়ে থাকলে তা সবসময়ই বিজ্ঞানীদের উদ্বিগ্ন করে।
যৌন আচরণের সাথে সম্পর্ক?
যারা মাংকিপক্সে সংক্রমিত হচ্ছেন তাদের অনেকেই সমকামী বা উভকামী তরুণ বা যুবক।
যৌন ক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে মাংকিপক্স ছড়াচ্ছে এবং আক্রান্তদের বেশিরভাগেরই যৌনাঙ্গ এবং তার আশপাশের জায়গায় গুটি হতে দেখা যাচ্ছে।
জেমস গ্যালাহার জানাচ্ছেন, কেন সমকামী-উভকামী পুরুষরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন তা স্পষ্ট নয়। এটা কি শুধুই ঘটনাচক্রে এমন হচ্ছে, নাকি যৌন আচরণের ফলে ভাইরাসটি সহজে ছড়াতে পারছে-তাও স্পষ্ট নয়।
মাংকিপক্স সংক্রমিত কারো ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এলে তা অন্যের দেহে ছড়াতে পারে। ফাটা বা কাটা চামড়া, চোখ, নাক বা মুখ দিয়ে মানুষের দেহে ঢুকতে পারে মাংকিপক্স ভাইরাসটি।
এটিকে আগে যৌনসম্পর্কবাহিত রোগ বলে চিহ্নিত করা হয়নি । কিন্তু বলা হচ্ছে যে যৌনমিলনের সময় ভাইরাসটি সরাসরি একজন থেকে আরেকজনের দেহে চলে যেতে পারে।
ব্রিটেনের চিকিৎসকরা এর মধ্যেই সতর্ক করে দিয়েছেন যে মাংকিপক্স সেদেশের যৌনস্বাস্থ্য সেবার ওপর বড় রকমের প্রভাব ফেলতে পারে। এবং এধরনের কিছু ক্লিনিকের কর্মীদের এর মধ্যেই গুটিবসন্তের টিকা দেয়া হয়েছে।
মাংকিপক্স কীভাবে ছড়ায়
মাংকিপক্স একটি ভাইরাসজনিত রোগ। সাধারণত এটি ‘মৃদু’ অসুস্থতা সৃষ্টি করে। মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার বাইরে এ রোগ খুবই বিরল।
এই ভাইরাসটি গুটি বসন্ত রোগের ভাইরাসের মত একই গোত্রের-কিন্তু অনেক কম মারাত্মক এবং বিশেষজ্ঞদের মতে এতে সংক্রমিত হবার সম্ভাবনাও কম। এটি একটি ডিএনএ জাতীয় ভাইরাস এবং কোভিড বা ফ্লু ভাইরাসের মত সহজে বা দ্রুতগতিতে এর মিউটেশন বা রূপান্তর ঘটে না।