হৃৎপিণ্ড অবিরাম কাজ করে আমাদের বাঁচিয়ে রাখছে। এটিকে আমরা সবাই সুস্থ রাখতে চাই। তবু বুঝে না বুঝে এর ওপর অত্যাচার করি। এ কারণে বিশ্বে কার্ডিয়াক বা হৃদরোগীর সংখ্যা বাড়ছে। হৃদরোগ হওয়ার পেছনে নানা কারণের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি মাড়ি রোগের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।
করোনারি আর্টারি ডিজিজ ও স্ট্রোক
মাড়ি রোগ থেকে জীবাণু ও তাদের তৈরি ক্ষতিকর পদার্থ রক্তবাহিকার মধ্যে সঞ্চালিত হতে পারে। ফলে যাদের উচ্চরক্তচাপ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, রক্তে অতিরিক্ত কলস্টেরল, ধূমপায়ী, বাতজ্বর, কৃত্রিম ভাল্ব, জš§গত হার্টের রোগ, দৈহিক পরিশ্রম কম হয় তাদের রক্তনালির মধ্যকার স্থানটি চিকন করতে শুরু করে, যাকে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস বলা হয়।
এর ফলে হৃৎপিণ্ড পর্যাপ্ত রক্ত বা অক্সিজেন পায় না, তখন নানা জটিলতা তৈরি হয়। সঠিক সময় চিকিৎসা না পেলে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা না থাকলেও মাড়ি রোগ থাকলে অ্যানজাইনা ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি দুই থেকে তিন ভাগ বেশি দেখা যায়। একই কারণে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন কমে গিয়ে স্ট্রোকের মতো জটিলতার তৈরি করতে পারে।
মাড়ির প্রদাহ থেকে ব্যাকটেরিয়া হার্টের অতি গুরুত্বপূর্ণ ভাল্বগুলোকে আক্রান্ত করতে পারে। গবেষণা বলে মাড়ির ব্যাকটেরিয়াকে হার্টের ভাল্বেও পাওয়া গেছে। যাদের কৃত্রিম ভাল্ব সংযোজিত বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের মুখের যত্নে কোনো অবহেলার সুযোগ নেই।
হার্টের ভেতরকার স্তরের প্রদাহ বা অ্যান্ডোকার্ডাইটিসের সঙ্গে মাড়ির রোগের যোগসূত্র পাওয়া যায়, দীর্ঘমেয়াদি মাড়ির প্রদাহ থেকে রক্তে সিথরিঅ্যাক্টিভ প্রোটিন পাওয়া যায়। অন্যদিকে হার্টের ব্যথা নিচের চোয়ালে অনুভব হওয়ার অনেক ইতিহাস ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে।
হার্টে অক্সিজেনের ঘাটতি হলে সেখান থেকে ব্যথা চোয়ালে ও দাঁতে অনুভব হতে পারে, বিশেষ করে মেয়েদের হার্টের ব্যথা বাম দিকের নিচের দাঁতে ও চোয়ালে অনুভূত হতে দেখা যায়। বিষয়টি শনাক্ত না হলে অপূরণীয় ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। মুখের স্বাস্থ্যের সঙ্গে হৃৎপিণ্ডের সুস্বাস্থ্য জড়িত, সুতরাং হার্টকে সবল রাখতে ও মুখের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হতে হবে।
উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মুখ শুষ্ক বা মাড়ি ফুলে যাওয়ার আশঙ্কা আছে, রক্ত তরলকরণ ওষুধ সেবনেও মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়তে পারে, এমনটা হলে দ্রুত ডেন্টাল চিকিৎসকের পরামর্শে কারণ নিশ্চিত হয়ে ওষুধের বিষয় নিয়ে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ জরুরি, তানা হলে মুখের স্বাস্থ্য হুমকিতে থাকে ।
– সকালে নাস্তা ও রাতে খাবার পর দু’মিনিট ধরে দাঁতের পাঁচটি পৃষ্ঠ (সামনের, ভেতরের, চর্বনে
ব্যবহৃত ও পাশাপাশি দু’দাঁতের মধ্যবর্তী পৃষ্ঠ) নিয়ম মেনে পরিষ্কার করতে হবে। দু’দাঁতের মধ্যে খাবার জমলে সাধারণ টুথ ব্রাশে এগুলো পরিষ্কার হয় না, টুথপিক বা কাঠির পরিবর্তে বাজারজাত ডেন্টাল ফ্লস বা ইন্টার ডেন্টাল ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে।
– চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনে মাউথ ওয়াশ ব্যবহার।
– ব্রাশের পর আঙুল দিয়ে আলতো করে মাড়ি ম্যাসাজ ও জিহ্বা পরিষ্কার।
– চিনির তৈরি খাবারকে কমাতে হবে, চিনিকে সাদা বিষ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়, মিষ্টিজাতীয় খাবার যেমন চকলেট, আইসক্রিম, বিস্কুট, কমল পানীয়, আলুর চিপস্, কেক এসবই মুখের ও শরীরের জন্য অস্বাস্থ্যকর, এ ধরনের খাবারকে কমিয়ে মৌসুমি ফরমালিনমুক্ত তাজা ফল, শাকসবজি, দুধ, টকদই, ডিম, সামুদ্রিক মাছ, ছোট মাছে উৎসাহিত হতে হবে। পর্যাপ্ত পুষ্টি মুখের স্বাস্থ্যকে উন্নত রাখে।
– শরীরের অন্য রোগ যেমন ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিডিটি ইত্যাদিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
– প্রতিদিন নিয়ম করে ৩০ থেকে ৪৫ মি. ব্যায়াম বা দ্রুত হাটতে হবে।
– ছয় মাস অন্তর বা মুখের মধ্যে যে কোনো অস্বাভাবিকতায় অনুমোদিত বিডিএস ডিগ্রিধারী চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
– ধূমপান ও পান জর্দামুক্ত থাকতে হবে।
– চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন ক্ষতির কারণ হতে পারে।
লেখক: রাজ ডেন্টাল সেন্টার, কলাবাগান, ঢাকা ও সদস্য সচিব, বিএফডিএস