স্বাস্থ্য সচেতনতার অংশ হিসেবে আপনি যদি খাবারে চিনির বিকল্প হিসেবে কৃত্রিম চিনি বা সুইটনার ব্যবহার করে থাকেন তাহলে আপনার জন্য দুঃসংবাদ। এক গবেষণায় দেখা গেছে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে কৃত্রিম সুইটনার ‘ইরিথ্রিটল’। ইরিথ্রিটলও এক ধরনের চিনিজাতীয় অ্যালকোহল (সুগার অ্যালকোহল)। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরিথ্রিটলের মধ্যে চিনির প্রায় ৭০ শতাংশ মিষ্টতা পাওয়া যায় এবং এটিকে জিরো-ক্যালরি হিসেবেই ধরা হয়।
সোমবার নেচার মেডিসিন জার্নালে এই সমীক্ষাটি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, হৃদরোগের জন্য ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে যেসব অসুখ, যেমন কারো যদি ডায়াবেটিস থাকে এবং তাদের রক্তে সর্বোচ্চ মাত্রায় ইরিথ্রিটল মেলে, তাহলে তাদের হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি দ্বিগুণ।
প্রকৃতিতে প্রাপ্ত এবং কিটোজেনিক ডায়েটে ব্যবহৃত বিভিন্ন খাবারে মিষ্টি স্বাদ যুক্ত করতে ব্যবহৃত সুইটেনার (যা ইরিথ্রিটল হিসেবেই পরিচিত) স্ট্রোক, রক্ত জমাট বাঁধা এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকিও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
গবেষণায় আরও যে সব ল্যাব রিসার্চ এবং প্রাণী গবেষণা উপস্থাপন করা হয়েছে তা বলছে, ইরিথ্রিটল রক্তের প্লাটিলেটগুলোকে সহজে জমাট বাঁধায়।
আমেরিকার ন্যাশনাল জিউয়িশ হেলথ নামে একটি হাসপাতালের কার্ডিওভাসকুলার প্রিভেনশান এবং ওয়েলনেস বিভাগের পরিচালক ডা. অ্যান্ড্রু ফ্রিম্যান বলেছেন, ইরিথ্রিটলের ব্যবহারে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি রয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। এর জন্যে আরও গবেষণার প্রয়োজন। তবে আপাত সতর্কতার অংশ হিসেবে ডায়েটে ইরিথ্রিটল সীমিত করাই উচিত হবে।
এদিকে ‘গবেষণাটি এখনও পর্যালোচনা করা হয়নি’ জানিয়ে দ্য ইউরোপীয় অ্যাসোসিয়েশন অব পলিওল প্রডিউসারস সিএনএনের কাছে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের সেন্টার ফর মাইক্রোবায়োম অ্যান্ড হিউম্যান হেলথ- এর পরিচালক হ্যাজেন বলেন, ইরিথ্রিটল আসলে চিনির মতোই দেখতে, খেতেও চিনির মতো এবং এটি দিয়ে বেকিংও করা যাবে।
তিনি আরও যোগ করেন, এটি এখন খাদ্য খাতের অন্যতম পরিচিত একটি উপাদান হয়ে গেছে। কিটো এবং অন্যান্য কম শর্করাযুক্ত (লো-কার্ব) খাবার এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বাজারজাত করা হয় এমন খাবারগুলোতে ইরিথ্রিটল একটি জনপ্রিয় সংযোজন। ‘ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার’ বলে আখ্যা দেওয়া কিছু খাবারে তো আমরা অন্যান্য আইটেমের চেয়ে ইরিথ্রিটলের পরিমাণই (ওজন অনুসারে) বেশি দেখতে পেয়েছি।
ইরিথ্রিটল ও কার্ডিওভাস্কুলার সমস্যাগুলোর মধ্যে যে যোগসূত্র রয়েছে তা অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই আবিষ্কার হয়ে গেছে বলে জানান হ্যাজেন। তার ভাষ্যে, “আমরা এটা প্রত্যাশাই করিনি। আমরা আসলে এটা খুঁজছিলামই না।”
হ্যাজেনের গবেষণার লক্ষ্য ছিল খুব সাধারণ- ব্যক্তির রক্তের মধ্যে অচেনা কোনো কেমিক্যাল বা যৌগ খুঁজে বের করা যা হয়তোবা আগামী তিন বছরের মধ্যে তাদের হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক বা মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। আর সে উদ্দেশ্যেই হ্যাজেনের টিম ২০০৪ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকিতে আছে এমন ১১৫৭ জন ব্যক্তির রক্তের নমুনা বিশ্লেষণ করা শুরু করেন। সেখান থেকেই তারা ইরিথ্রিটলের ভূমিকাটি খুঁজে পান।
গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য হ্যাজেনের দল যুক্তরাষ্ট্রে ২১০০’রও বেশি মানুষের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে। সেই সাথে ২০১৮ সালের মধ্যে ইউরোপে তাদের সহকর্মীদের দ্বারা সংগৃহীত অতিরিক্ত ৮৩৩টি নমুনা পরীক্ষা করে।