লিউকেমিয়া : শিশুরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় লিউকেমিয়ায়। এটি রক্ত ও অস্থিমজ্জার ক্যানসার। শিশুরা রক্তশূন্যতা, অতিরিক্ত ক্লান্তি, জ্বর, হাড়ের ব্যথা, অতিরিক্ত রক্তপাত- এসব সমস্যা নিয়ে আসেন চিকিৎসকের কাছে। পরবর্তীকালে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে এটি ডায়াগনোসিস করা হয়।
লিউকেমিয়ার ধরন : একিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া এটি সাধারণত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এই ধরনটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। এছাড়া একিউট মায়েলোজেনাস লিউকেমিয়া শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক- উভয়ের মধ্যে হতে পারে। ক্রনিক লিম্ফোসাইটিক লিউকেমিয়া সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের বেশি হয়। ধীরে ধীরে বিকশিত হয়। ক্রনিক মায়েলোজেনাস লিউকেমিয়া মধ্যবয়সী ও বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। ফিলাডেলফিয়া ক্রোমোজোম (Philadelphia Chromosome) নামক জিনগত পরিবর্তনের ফলে হয়ে থাকে। লিউকেমিয়া শনাক্ত করতে বিভিন্ন ধরনের রক্ত পরীক্ষা, রক্তকণিকার আকার ও গঠন বিশ্লেষণ করা হয়। এছাড়াও বোন ম্যারো বা হাড়ের মজ্জা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে লিউকেমিয়া ক্যানসার সেল আছে কিনা, তা দেখা হয়। এছাড়াও বেশ কিছু জেনেটিক ও সাইটোজেনেটিক পরীক্ষা পদ্ধতি রয়েছে।
লিউকেমিয়ার চিকিৎসা পদ্ধতি : কেমোথেরাপি লিউকেমিয়ার প্রধান চিকিৎসা। এছাড়া টার্গেটেড থেরাপি, ইমাটিনিব, ইমিউনোথেরাপি, রেডিওথেরাপি ছাড়াও স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট লিউকেমিয়া রোগীর জন্য কার্যকর।
বাংলাদেশে লিউকেমিয়া : বাংলাদেশি শিশুদের ক্যানসারের মধ্যে লিউকেমিয়া সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। বাংলাদেশে লিউকেমিয়ার চিকিৎসা সেবা পাওয়ার জন্য জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (NICRH), বিএসএমএমইউ’র হেমাটোলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সন্ধানী হেমাটোলজি ইউনিট, ঢাকা শিশু হাসপাতাল- এসব স্পেশালাইজড সেন্টারগুলোয় যোগাযোগ করতে হবে।
ক্যানসার প্রতিরোধ : শিশুর ক্যানসার প্রতিরোধ করা কঠিন। তবে কিছু সতর্কতা গ্রহণ করলে ঝুঁকি কমানো যেতে পারে। যেমন- গর্ভাবস্থায় মায়ের স্বাস্থ্য সচেতনতা, ধূমপান, অ্যালকোহল ও ক্ষতিকর রাসায়নিক থেকে দূরে থাকা। অর্গানিক ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। কিছু ভাইরাসজনিত ক্যানসার প্রতিরোধে HPV ও হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন কার্যকর। শিশুকে অপ্রয়োজনীয় রেডিয়েশন এক্সপোজার থেকে রক্ষা করা। বংশগত ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা বা স্ক্রিনিং করা।
লেখক : চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য গবেষক; ফেলো, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ, রাজশাহী