ডা. আতাউল হক: বড়দের মতো শিশুদেরও কিডনি রোগ হয়। এর পাশাপাশি এ রোগ থেকে হৃদরোগের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। অ্যাকিউট গ্লোমেরুলো নেফ্রাইটিস, লুপাস নেফ্রাইটিস, রেনার আর্টারিয়াল স্টেনোসিস– এ রকম অনেক রোগ থেকে শিশু হার্টের সমস্যায় ভুগতে পারে। এ ছাড়া যেসব শিশু দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে আক্রান্ত, তারাও পরবর্তী সময়ে দ্রুত হৃদকম্পন, হার্টের মাংসপেশির রোগ কার্ডিওমায়োপ্যাথি, স্ট্রোক, হার্ট ফেইলিওর ইত্যাদির শিকার হতে পারে।
অ্যাকিউট গ্লোমেরুলো নেফ্রাইটিস লক্ষণ
প্রধানত স্কুলগামী ছেলেমেয়েদের মধ্যে এ রোগ হয়ে থাকে। হঠাৎ করে চোখ-মুখ ও সারাশরীর ফুলে যেতে পারে। প্রস্রাব হয় বন্ধ কিংবা পরিমাণে খুব অল্প হতে পারে। বেশির ভাগ সময় প্রস্রাবের রং লাল থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০ থেকে ২১ দিন আগে গলাব্যথা হয়ে থাকে। কখনও ত্বকে খোসপাঁচড়াজাতীয় চিহ্ন থাকে। শিশুর রক্তচাপ বেশি থাকতে পারে।
চিকিৎসা
প্রথম দু-এক সপ্তাহ শিশুকে বিশ্রামে রাখতে হবে। অসুখ বাড়িতে সামলানো গেলেও উচ্চ রক্তচাপ ও প্রস্রাব কমে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দিলে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। শিশুর খাবারে লবণ দেওয়া যাবে না। পটাশিয়ামযুক্ত খাবার, যেমন– ডাব, কলা, ফলের জুস ও ওষুধ বাদ দিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শে শিশুকে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করাতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ পটাশিয়াম মাত্রা, শ্বাসকষ্ট, চোখে ঝাপসা দেখা, মাথাব্যথা, খিঁচুনি, বমি, খুব কম প্রস্রাব– এসব জটিলতায় দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
এ রোগ সাধারণত কিশোরীদের অধিক পরিমাণে দেখা দিয়ে থাকে। এক ধরনের জটিল ইমিউনজনিত সমস্যার কারণে রোগটি দেখা দেয়। রোগীর নেফ্রাইটিস জাতীয় সমস্যা ছাড়াও রক্তকোষের সমস্যা, যেমন– রক্তক্ষরণ ও রক্তস্বল্পতা, হার্টে পানি জমা, বাতের ব্যথা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। যথাসময়ে চিকিৎসা না নিলে রোগী ধীরে ধীরে জটিল ধরনের কিডনি রোগে আক্রান্ত হন। হার্টে পানি আসা ছাড়াও রোগী উচ্চ রক্তচাপের শিকার হতে পারেন।
রেনাল আর্টারিয়াল স্টেনোসিস
অনেক শিশু রয়েছে, যারা কম বয়সেই উচ্চ রক্তচাপের শিকার হয়ে থাকে। অনেক ওষুধ দিয়েও তাদের উচ্চ রক্তচাপ কমানো সম্ভব হয় না। কিডনির এনজিওগ্রাম করালে ঘটনাচক্রে কিডনির রক্তনালির সমস্যা ধরা পড়ে। এ ধরনের সমস্যাকেই বলা হয় রেনাল আর্টারিয়াল স্টেনোসিস। কিডনির রক্তনালি সংকীর্ণ হয়ে পড়লে ওষুধে তেমন আর কাজ হয় না। এনজিওপ্লাস্টির মাধ্যমে কিডনির রক্তনালিতে রিং পরালে রক্তচাপ আবার স্বাভাবিক হয়ে আসে। কিডনি রোগে আক্রান্ত শিশুদের প্রাথমিক স্তরে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা জরুরি।
লেখক : অধ্যাপক, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল।