জিবিএস রোগীর এত দুর্বলতা সত্ত্বেও সাধারণ অনুভূতি, স্মৃতিশক্তি, পায়খানা-প্রস্রাবের কোনো সমস্যা হয় না এবং রোগী কখনও অজ্ঞান হয়ে যায় না। এসব রোগীকে সবসময় হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হয়। নিউরোলজিস্ট বা স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগের উপসর্গ, শারীরিক পরীক্ষা, এনসিএস নামক স্নায়ুর পরীক্ষা এবং মস্তিষ্কের রস বিশ্লেষণ করে রোগটি নির্ণয় করেন।
রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস, নাড়ির গতি, ব্লাড প্রেসার ইত্যাদির প্রতি সার্বক্ষণিক লক্ষ্য রাখতে হয়। যদি শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তবে তাৎক্ষণিকভাবে রোগীকে আইসিইউতে স্থানান্তর করতে হয়। নিয়মিত হাত-পায়ের ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, রোগীকে দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করে। এ রোগের নির্দিষ্ট চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং ধনীশ্রেণি ব্যতীত অন্যরা তা গ্রহণ করতে পারে না। প্লাজমাফেরোসিস বা আইভি ইমিউনো গ্লোবিনের খরচ প্রায় ৩ থেকে ১০ লাখ টাকা। কোনো কোনো রোগীর পুরোপুরি আরোগ্য পেতে প্রায় এক বছর লেগে যায়। প্লাজমাফেরোসিস তুলনামূলকভাবে কম ব্যয়বহুল। তবে আইভি ইমিউনোগ্লোবিনের খরচ প্রায় ৩ থেকে ১০ লাখ টাকা। উপসর্গ শুরুর দুই সপ্তাহের মধ্যে এ চিকিৎসা দিতে হয়। এর পরে ইমিউনোগ্লোবিনের কর্যকারিতা থাকে না। জিবিএস এর ক্ষেত্রে সাধারণত প্রায় ৮০ ভাগ রোগী সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করে, ৫-১০ ভাগ রোগী কিছু না কিছু শারীরিক দুর্বলতা স্থায়ীভাবে থেকে যায় এবং প্রায় ৫-৬ ভাগ রোগী মারা যায়।
সাধারণত কোনো ইনফেকশন যেমন ডায়রিয়া বা শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের দুই বা তিন সপ্তাহ পরে জিবিএসএর লক্ষণসমূহ দেখা দেয়। কখনও কখনও ভ্যাকসিন দেওয়ার পরেও জিবিএস হতে পারে। তবে ভয়ের কারণ নেই। অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রাখলে আরোগ্য লাভ সম্ভব।
লেখক : অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল চেম্বার পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী শাখা-২
মোহাম্মদপুর, ঢাকা।